যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কের পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এখন অনেকটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, শি চীনা জনগণকে দেখাতে চাচ্ছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তার দেশের আছে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক দাদাগিরি’র বিরুদ্ধে চীন যে দাঁড়াতে পারে, তাও প্রমাণ করতে চান তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা কমিয়ে চীনকে আরও স্বনির্ভর করার যে কৌশলে শি গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ তাতে সহায়তা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘র্যান্ড চায়না রিসার্চ সেন্টারের’ পরিচালক জুড ব্লশেতের ভাষায়, “এটা অর্থনীতির সেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, যার প্রস্তুতি চীন এতদিন নিয়ে আসছে।”
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানায়, দুই পরাশক্তি এখন মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছে—প্রশ্ন হলো কে আগে পিছু হটবে।
গত সপ্তাহে শুরু হওয়া শুল্ক যুদ্ধে হোয়াইট হাউস জানায়, চীনের পণ্যের ওপর সর্বমোট ১৪৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করা হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক ৮৪ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ভাগ করে দেয়।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটস সেন্টার ফর চায়না অ্যানালাইসিসের গবেষক নেইল টমাস বলেন, “এ মুহূর্তে শি হয়তো হিসাব কষছেন যে, শুল্কের আঘাত চীন সইতে পারবে এবং যুক্তরাষ্ট্রই প্রথমে পিছু হটবে।
টমাস আরও মনে করেন, বহু বছরের বৈচিত্র্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে চীন এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল।
ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, চীন রপ্তানিনির্ভর দেশ হওয়ায় শুল্কের চাপে তাকে নমনীয় হতে হবে। অন্যদিকে বেইজিং মনে করে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে এবং মিত্রদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
যদিও ট্রাম্প শিকে ‘বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি চুক্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য যতটা সহজ, একটা চুক্তিতে যাওয়া শির জন্য ততটা সহজ নয়।
নেইল টমাস বলেন, “শির জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসা একটি রাজনৈতিক ঝুঁকি। কেবল আলোচনায় বসলেই চাপে পড়তে হতে পারে। তবে শি শুল্ক যুদ্ধকে ওয়াশিংটননির্ভরতা কমানোর একটি সুযোগ হিসেবেও দেখছেন।”
চীন চাইলে আরও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে—যেমন বিদেশি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সীমিত করা বা বিরল খনিজের রপ্তানি কমিয়ে দেওয়া।
এই বিরল খনিজ ইলেকট্রিক গাড়ি, প্রতিরক্ষা, ক্লিন এনার্জি ও ইলেকট্রনিকস খাতে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বে এই খনিজের ৯০ শতাংশই উৎপাদন করে চীন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি এই উপাদান আমদানি করে, যার প্রধান উৎস চীন।
টমাস বলেন, “এটা চীনের বড় অস্ত্র। সরবরাহ বন্ধ হলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ ও এশিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
হলিউডের সিনেমায় বিধিনিষেধ আরোপের হুমকিও দিয়ে রেখেছে বেইজিং।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের উপদেষ্টা স্কট কেনি বলেন, “৯০ দিনের জন্য সম্পূরক শুল্ক স্থগিতের বিষয়টিকে চীন ট্রাম্পের পিছু হটা হিসেবেই দেখছে।
আমি মনে করি, চীন এটাকে ট্রাম্পের একটা দুর্বলতা হিসেবে নিয়েছে এবং পরিস্থিতি বুঝে উঠতে তারা আরও সময় নেবে।”