ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আরও ৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন একে অপরের ভাই, যারা ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাবার সরবরাহ করছিলেন।
এ ছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১১ জন।
সোমবার (১৪ এপ্রিল স্থানীয় সময়) আলজাজিরা ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে গাজাজুড়ে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯৪৪ এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ১৫৬-তে পৌঁছেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ ছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর এক হামলায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং চিকিৎসা না পাওয়ায় এক শিশুর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জেরে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও আগ্রাসন
ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে, যার ফলে ১ হাজার ৫৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ১১৫ জন আহত হন। এর মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আগে, আন্তর্জাতিক চাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ১৯ জানুয়ারি আংশিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। তবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় মতানৈক্যের কারণে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়।
মানবিক বিপর্যয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান আক্রমণের ফলে গাজার ৮৫ শতাংশ জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। খাদ্য, পানি এবং ওষুধের মারাত্মক সংকটে রয়েছে পুরো উপত্যকাটি।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
বর্তমানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলাও বিচারাধীন।
সূত্র: আলজাজিরা, জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
আপনার মতামত লিখুন :