‘আমার এখন চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা সামনে। পড়াশোনায় মন দেয়ার কথা। কিন্তু মন তো পড়ে আছে গাজায়…।’ কথাগুলো বলছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজপড়ুয়া এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী। নিরাপত্তার কারণে তার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
গাজায় বাড়ি, স্বজন, স্মৃতি- সব আজ ধ্বংসস্তূপে। পরিবারের সবাই এখন আশ্রয় নিয়েছেন একটি শরণার্থী ক্যাম্পে। যদিও গত সপ্তাহেই সেই ক্যাম্পে ইসরায়েলি সেনারা কামান হামলা চালায়। ভাগ্যক্রমে তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রাণে বেঁচে গেলেও চারজন আহত হন। বর্তমানে তারা অন্য একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
‘প্রতিদিন কথা বলা সম্ভব হয় না। ভয়, উৎকণ্ঠা আর নির্ঘুম রাত- এভাবেই কাটছে আমাদের সময়। আমার পরিচিত প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকেই স্বজন হারিয়েছেন,’ বলে চললেন তিনি।
শুধু গাজা নয়, মনেও চলছে যুদ্ধ
মেডিকেল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় হলেও মন পড়ে থাকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে আসা খবরের দিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুললেই দেখা যায়, ধ্বংস, মৃত্যু, কান্না। তাই ইচ্ছা করেই এখন এসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন তিনি।
‘আমাদের মেডিকেল কলেজে প্রায় ২০ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী আছেন। সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারপরও পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করছি। কারণ আমরা জানি, চিকিৎসক হওয়াটাই আমাদের ভবিষ্যতের অস্ত্র।’
বাংলাদেশি বন্ধুদের পাশে পেয়ে অনুপ্রেরণা
গাজার দুর্যোগপূর্ণ সময়েও যেটা একটু সান্ত্বনা দিচ্ছে, তা হলো- বাংলাদেশি বন্ধু ও শিক্ষকদের সহানুভূতি।
‘আমাদের বাংলাদেশি সহপাঠীরা, শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত আমাদের খোঁজখবর রাখেন। ক্লাসে গেলে জিজ্ঞেস করেন- বাড়ির খবর কী? কেউ আহত হয়েছেন কি না? এমন আপন মানুষের মতো ব্যবহার আমাদের মনে সাহস জোগায়।’
তিনি বলেন, ‘৬ এপ্রিল ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’-য় বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে শুধু সহানুভূতি নয়, বরং এক ধরনের ভ্রাতৃত্ব।’
আশা জিইয়ে রেখেছেন, ফিরবেন নিজের দেশে
‘আমি জানি, ফিলিস্তিন এক দিন মুক্ত হবে। সেইদিন আমি শুধু একজন চিকিৎসকই হব না, বরং একজন সাক্ষী হব সেই বিজয়ের, যখন বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াব।’
এই আশাই তাঁকে টিকিয়ে রেখেছে, কষ্টের মাঝেও। তার মতো অনেক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে একই স্বপ্ন—ফিরে যাওয়া এক দিন নিজের স্বাধীন দেশে, সেসব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আবার নতুন করে বাঁচার যাত্রা শুরু করা।
নিবন্ধটি অনুলিখন করেছেন: জাওয়াদুল আলম
সূত্র: প্রথম আলো
আপনার মতামত লিখুন :