এবার যুক্তরাষ্ট্রের আইনি জটিলায় পড়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিক মেটা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাজারে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এগিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য মেটা একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়েছে।
আদালতে এ অভিযোগ প্রমাণ হলে মেটাকে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করে দেয়ার নির্দেশও দেয়া হতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ন্যাশনাল নিউজ।
গত সপ্তাহে এফটিসি জানায়, মেটা নিজেদের বাজার ধরে রাখতে অসাধু কৌশল নিয়েছে। প্রতিযোগীদের দমাতেই তারা ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করেছিল। এতে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য বিকল্প কমে গেছে এবং বাজারে সৎ প্রতিযোগিতা ব্যাহত হয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, মামলার রায় মেটার জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে। এমনকি সামাজিক মাধ্যমের ভবিষ্যত চেহারাও বদলে যেতে পারে।
মামলার নথিতে এফটিসি উল্লেখ করেছে, মেটা প্রতিযোগিতাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে একের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে কিনে নিয়েছে। এসব অধিগ্রহণ অবৈধ এবং অন্যায্য প্রতিযোগিতার কৌশলের অন্তর্ভুক্ত, যাতে নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো বড় হয়ে উঠতে না পারে।
মামলাটির প্রস্তুতি চলছিল প্রায় দুই বছর ধরে। এর সূচনা হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময়, যখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের আইনপ্রণেতারাই মেটার একচেটিয়া বাজারদখল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মেটা এর আগেও মামলাটি থামানোর জন্য আদালতে ‘সংক্ষিপ্ত রায়ের’ আবেদন করেছিল ২০২৪ সালে। কিন্তু সে চেষ্টায় সফল হতে পারেনি মেটা।
আদালতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে মেটা বলেছে, তারা বর্তমানে টিকটক, এক্স, ইউটিউব ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো শক্ত প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়ছে। ফলে তাদের একচেটিয়া আধিপত্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এছাড়া মেটা দাবি করেছে, ইনস্টাগ্রাম (২০১২) ও হোয়াটসঅ্যাপ (২০১৪) কেনার সময় সেই অধিগ্রহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদনেই হয়েছিল। এখন সেই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, যা ‘দ্বিচারিতার’ উদাহরণ বলে অভিযোগ মেটার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন এফটিসিকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে মেটার গত দশকের কর্মকাণ্ড ব্যবহারকারীদের বিকল্পের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে কিনা কিংবা বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ব্যাহত করেছে কিনা। এটাই মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
রোববার এক ব্লগ পোস্টে মেটার প্রধান আইন কর্মকর্তা জেনিফার নিউস্টেড মামলাটিকে ‘দুর্বল ও প্রযুক্তি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি লেখেন, এটা অযৌক্তিক যে এফটিসি একই সাথে একটি দুর্দান্ত আমেরিকান কোম্পানি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে, যখন প্রশাসন চীনা মালিকানাধীন টিকটককে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এই মামলাটি মেটার অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলেছে।
মার্কিন নির্বাচনের পর থেকে ট্রাম্পের প্রতি নিয়মিত আহ্বান জানিয়ে মেটা বলছে, ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিদান হিসেবে তারা কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ও সেন্সরশিপ বাতিল চায়।
এফটিসির মুখপাত্র জো সিমনসন বলেছেন, ট্রাম্প-ভ্যান্স এফটিসি’র এই বিচারের জন্য কিছুই করতে পারেন না। আমরা দেশের সবচেয়ে পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান কিছু আইনজীবী নিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি।
এ মামলায় মেটার সিইও মার্ক জুকারবার্গ সাক্ষ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।