দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক উত্তেজনার পর সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে। পাঁচ বছর আগে হিমালয় সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর বন্ধ হওয়া যাত্রীবাহী বিমান চলাচল আবারও চালুর পথে। দুই দেশ ইতিমধ্যেই সরাসরি বিমান চলাচল চালু করার বিষয়ে এক দফা আলোচনা সম্পন্ন করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, নয়াদিল্লির সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এই বৈঠকের তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল পুনরায় চালু করতে এখনো কিছু মতপার্থক্য রয়ে গেছে, যেগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা চলছে।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব ভামলুনমং ভুয়ালনাম জানান, “চীনের বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছে। যাত্রী পরিবহন চালু করতে আমরা ইতিবাচক আলোচনার মধ্যেই আছি।”
সম্পর্কের অতীত উত্তেজনা
২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ভারতের অন্তত ২০ জন সৈন্য এবং চীনের চারজন সেনা নিহত হয়। এই সংঘর্ষের পর ভারত-চীন কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং যাতায়াত খাতে ব্যাপক অচলাবস্থা তৈরি হয়।
ভারত চীনা বিনিয়োগে বিধিনিষেধ আরোপ করে, শত শত চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং যাত্রীবাহী বিমান চলাচল স্থগিত করে। যদিও কার্গো ফ্লাইট চালু ছিল।
পুনরায় সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ
সম্প্রতি এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে উভয় দেশই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত জানুয়ারিতে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব নিরসনে একমত হয় ভারত ও চীন।
২০২৪ সালের অক্টোবরে সীমান্তে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। সেই মাসেই রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়, যা ছিল বরফ গলার আরেকটি ইঙ্গিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কে উষ্ণতা আনবে না, বরং দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক, পর্যটন ও বিমান খাতেও নতুন গতি সঞ্চার করবে। বিশেষ করে চীনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধাক্কা হতে পারে, কারণ মহামারির পর দেশটির আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল এখনো পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি।
কী অপেক্ষা করছে সামনে?
যদিও যাত্রীবাহী বিমান চালুর নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে দুই দেশের আগ্রহ এবং সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে, খুব শিগগিরই আকাশপথে আবারও শুরু হবে যাত্রী পরিবহন। এটা শুধু দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের একটি প্রতীক নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতারও একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।
আপনার মতামত লিখুন :