অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ৫০ হাজার ৯৮৩ জন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ২৭৪ জনের বেশি। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই হামলায় গাজার ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
অবরোধ, দুর্ভিক্ষ ও ওষুধ সংকটের মধ্য দিয়ে ধুঁকছে ২৩ লাখ মানুষের জনপদটি।
এই ভয়াবহ মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল ঘরোয়া সমালোচনার মুখেও পড়েছে। এবার সরাসরি দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ইসরায়েলের শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান ড্যান হালুৎজ। তিনি বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু একজন শত্রু যিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। শত্রুকে বন্দি করা উচিত, হত্যা নয়।’
সোমবার রাতে ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হালুৎজ আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্যই নয়, ইসরায়েলের নিরাপত্তাও বিপন্ন করে তুলেছে।’
তার এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি। দলটির দাবি, ‘এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য বামপন্থীদের উৎসাহিত করবে।’ তারা এটিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার বলেও অভিহিত করেছে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি:
গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি। এ হামলা ১৯ জানুয়ারিতে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে পুরোপুরি লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
যুদ্ধবিরতির পর দুই মাসের স্বস্তি ছিল, কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে মতানৈক্য ইস্যু করে ফের হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মামলা:
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চাপ ক্রমেই বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
একইসঙ্গে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও একটি মামলা চলছে। যুদ্ধ, দখল এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার দাবি করছেন বিশ্বের বহু মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্র।
বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের নীরবতা ও দ্বিমুখী অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে সারা বিশ্বে বিক্ষোভ চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংগঠন ও সাধারণ নাগরিকরা গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তার দাবি জানাচ্ছেন।
বিশ্বব্যাপী এই ক্ষোভের মধ্যে ইসরায়েলের ভেতর থেকেও বিরোধিতা বাড়ছে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যরা গাজায় বন্দি ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তি এবং যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন করছে।
আপনার মতামত লিখুন :