মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর ও কাতার সোমবার (১৪ এপ্রিল) হামাসকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বলে মিশরের রাষ্ট্রীয় সংযুক্ত টেলিভিশন চ্যানেল আল কাহেরা নিউজ জানিয়েছে। তবে হামাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবটির অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত গ্রহণযোগ্য নয়।
আল কাহেরা নিউজের সূত্র অনুযায়ী, হামাসের উত্তর এখনো অপেক্ষমাণ। পরে এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, তারা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রতিক্রিয়া জানাবে।
হামাস আবারও তাদের মূল দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান এবং ইসরায়েলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাস নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, তারা প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করছেন এবং ‘যত শিগগির সম্ভব’ এ ইস্যুতে নিজেদের সম্ভাবনা জানাবেন গোষ্ঠীর হাইকমান্ড।
তবে সেই প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। কারণ প্রস্তাবনায় এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রিকরণের দাবি জানিয়েছে।
সেই সঙ্গে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস যদি নিজেদের নিরস্ত্র করতে সম্মত হয়, কেবল তাহলেই গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে গোষ্ঠীটির সঙ্গে পরবর্তী আলোচনার সেশন শুরু করবে ইসরায়েল।
আবু জুহরি বলেন, ‘প্রতিরোধের অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়টি আমাদের জন্য একটি লক্ষ কোটি লাল রেখা- এটা আলোচনার বিষয় নয়।’
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এখনো আসেনি।
মিশরের রাষ্ট্রীয় তথ্য সংস্থার প্রধান আল কাহেরা নিউজকে জানান, ‘হামাস এখন সময়ের গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই বোঝে এবং আমি বিশ্বাস করি তারা দ্রুতই উত্তর দেবে।’
গত জানুয়ারির শেষদিকে কার্যকর হওয়া আগের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়ে মার্চে ইসরায়েল পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করে। সোমবার কায়রোতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আলোচনা- যেখানে যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয় ছিল মূল এজেন্ডা- সেটিও ফলপ্রসূ হয়নি বলে ফিলিস্তিনি ও মিশরীয় সূত্র জানিয়েছে।
হামাস বলেছে, তারা যুদ্ধের স্থায়ী অবসান এবং ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি ছাড়া চুক্তিতে রাজি হবে না। অপরদিকে, ইসরায়েল বলেছে, হামাস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এবং বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হবে না।
আবু জুহরি আরও জানান, ‘হামাস প্রস্তুত রয়েছে সব জিম্মিকে একসাথে মুক্তি দিতে, যদি যুদ্ধ বন্ধ করা হয় এবং ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে সরে যায়।’
গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১,৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং গাজা উপত্যকায় প্রবেশে সব ধরনের পণ্য সরবরাহে অবরোধ আরোপ করা হয়েছে।
বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছে বলে ইসরায়েল মনে করে।
অতিরিক্ত প্রেক্ষাপট:
- হামাস একটি ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থি সশস্ত্র সংগঠন, যেটি ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান এবং আরও কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
- ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল গাজায় পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ফলে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ হতাহত হন এবং বিশাল মানবিক সংকট দেখা দেয়।