দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ সিঙ্গাপুরে শুরু হয়েছে নির্বাচনী জোয়ার। আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশজুড়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এই লক্ষ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট থারমান শানমুগারত্মম। সোমবার (১৪ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী লরেন্স উওংয়ের পরামর্শের ভিত্তিতে এই সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়, নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স উওংয়ের নেতৃত্বে পিপলস অ্যাকশন পার্টির (প্যাপ) জনপ্রিয়তার প্রথম বড় পরীক্ষা। ২০২৪ সালের মে মাসে দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থাকা লি সিয়েন লুং পদত্যাগের পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন উওং।
প্যাপের একচেটিয়া রাজত্ব, বিরোধীরা কি এবার চমক দেখাবে?
১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্যাপ কখনোই নির্বাচনে হারেনি। একের পর এক জয় তাদেরকে দেশের ‘অপরাজেয় দল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দৃশ্যপট ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে প্যাপ জয়ী হলেও আগের তুলনায় তাদের আসন ও ভোট শেয়ার উভয়ই কমে যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, বিরোধীরা জেতে ১০টি আসন, যা দেশটির ইতিহাসে বিরোধীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও বিরোধী দলগুলো এখনো ব্যাপক শক্তিধর নয়, তবে নগরমুখী তরুণ ভোটারদের একটি অংশ পরিবর্তনের পক্ষে। বিশেষ করে হাউজিং, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের মতো ইস্যুতে মানুষের উদ্বেগ বেড়েছে।
নির্বাচনের কাঠামো ও প্রেক্ষাপট
সিঙ্গাপুরের এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে মোট ১১৫টি আসন রয়েছে। দেশটির আয়তন মাত্র ৭৩৫.৭ বর্গকিলোমিটার, তবে জনসংখ্যা ৬০ লাখ ৪০ হাজারের বেশি। পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ীরা সরাসরি জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
বিশ্বের অন্যতম স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সিঙ্গাপুরে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে সীমিত। এখানকার গণতন্ত্র ‘ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ’ থেকে পরিচালিত, যেখানে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নই মূলমন্ত্র।
এবার কী অপেক্ষা করছে?
আগামী নির্বাচনে প্যাপ সহজেই জয়ী হবে- এমনটাই অনেকের পূর্বাভাস। তবে প্রশ্ন এখন আর শুধু জয়ের নয়, বরং জয়ের ব্যবধান কতটা কমে আসছে, সেটিই দেখার বিষয়। পাশাপাশি নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স উওং জনভিত্তি কতটা গড়ে তুলতে পারেন, সেটাও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।