মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (১৪ এপ্রিল) ফের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ শুরু করার জন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি এমন কারও সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেন না যার শক্তি আপনার থেকে ২০ গুণ বেশি, তারপর আশা করেন যে কেউ আপনাকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে।’
এই মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে যখন জেলেনস্কি মার্কিন টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিক্সটি মিনিটস-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনকে যুদ্ধের বাস্তবতা ‘বিকৃতভাবে উপস্থাপন’ করার জন্য সমালোচনা করেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য
ট্রাম্প বলেন, ‘যখন আপনি যুদ্ধ শুরু করেন, তখন নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, আপনি সেই যুদ্ধে জিততে পারবেন। এখন কোটি কোটি মানুষ মারা গেছেন তিনজনের কারণে। ধরুন পুতিন এক নম্বর, বাইডেন যিনি জানেন না তিনি কী করছেন- দুই নম্বর, আর জেলেনস্কি তিন নম্বর। আমি কেবল চেষ্টা করতে পারি এটাকে থামাতে।’
তিনি আরও দাবি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টায় অগ্রগতি করছে, যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এর কোনো বাস্তব ফল দেখা যায়নি।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার আগেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’
জেলেনস্কির জবাব
সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে জেলেনস্কি ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘আমি এমন বিকৃত বাস্তবতায় অংশ নিতে চাই না যা আমার সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। আমরা কোনো আক্রমণ শুরু করিনি। রাশিয়া আগ্রাসী, আর আমরা ভুক্তভোগী।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে ভাইস প্রেসিডেন্ট (জেডি ভ্যান্স) কোনোভাবে পুতিনের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিতে চাইছেন। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি- এই যুদ্ধে মাঝামাঝি কিছু নেই। একজন আগ্রাসী রয়েছে, আর একজন শিকার।’
পটভূমি
ট্রাম্প এর আগেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দায় জেলেনস্কির ওপর চাপিয়েছেন। কিন্তু এবার তার বক্তব্য আরও সরাসরি ও আক্রমণাত্মক। জেলেনস্কির সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনার পরপরই ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া আসে, যা স্পষ্টতই প্রতিহিংসামূলক।
তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টে সিবিএস-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এফসিসি (ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন) যেন সিবিএস-কে সর্বোচ্চ জরিমানা ও শাস্তি দেয়।’
বিশ্লেষণ
বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্য কূটনৈতিক জটিলতা বাড়াতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো থামেনি এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনই কিয়েভের প্রধান ভরসা। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের বক্তব্য রাশিয়াকে মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা দিতে পারে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন থেকেই তিনি ন্যাটো এবং ইউক্রেন নিয়ে একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করে এসেছেন। জেলেনস্কির সঙ্গে তার বৈঠক এবং ফোনালাপ ঘিরেও একাধিকবার রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।