যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া থেকে তাদের সামরিক বাহিনী আগামী দুই মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ বিষয়ে ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেছে- এমন তথ্য জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক কৌশল এবং ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে এই পদক্ষেপ একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ওয়াশিংটন জানিয়েছে, সিরিয়ার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সেনারা শিগগিরই নিজ দেশে ফিরবে। এই প্রত্যাহার হবে ধাপে ধাপে, যাতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং স্থানীয় মিত্রদের (যেমন: কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ) নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে-
- যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ
- দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ থেকে সরে আসার নীতিমালা
- এবং মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি পুনর্গঠন
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তাদের আশঙ্কা, সিরিয়ায় মার্কিন সেনা অনুপস্থিতিতে ইরানপন্থী মিলিশিয়ারা আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে নিরাপত্তা হুমকি বাড়বে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের কৌশলগত প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। সিরিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতি একটি ভারসাম্য রক্ষা করত, বিশেষ করে ইরান এবং হিজবুল্লাহর প্রভাব ঠেকাতে।”**
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনা প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানেও প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে আইএসআইএস পুনরুত্থানের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এছাড়া, সিরিয়ার কুর্দি গোষ্ঠী যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী হিসেবে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তারাও এই ঘোষণায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
পটভূমি
বর্তমানে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে, যারা ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে লড়াই ও কুর্দি বাহিনীর সহায়তা করছে।
এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে ইরানপন্থী মিলিশিয়া, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী, কুর্দি গোষ্ঠী এবং তুরস্ক সমর্থিত যোদ্ধারা সক্রিয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু সিরিয়া নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত ভারসাম্যে বড় রকমের পরিবর্তন আনতে পারে। সামনের সপ্তাহগুলোতে এই প্রত্যাহারের বাস্তবায়ন ও এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সূচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।