শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১১:২৮ এএম

ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১১:২৮ এএম

ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎ কী?

পতাকা হাতে এক ফিলিস্তিনি। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) ২০২৫ সালে এসে এমন এক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যা শুধু এর অভ্যন্তরীণ শাসনের ভবিষ্যৎ নয়, বরং পুরো ফিলিস্তিনি জাতিসত্তার রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

দীর্ঘদিনের শাসন, কিন্তু কার্যত কোনো গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট ছাড়া পরিচালিত ফিলিস্তিন এখন একাধিক দিক থেকে চাপের মুখে- অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষোভ, প্রশাসনিক অকার্যকারিতা, আর আন্তর্জাতিক চাপের এক জটিল ছকে বন্দি। প্রায় দুই দশক ধরে শাসনরত কর্তৃপক্ষকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জটিলতা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসের মতো বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

২০০৭ সালে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের (হামাস) সঙ্গে সংঘাতের পর পশ্চিম তীরে কার্যত এককভাবে শাসন চালিয়ে যাচ্ছে পিএ। কিন্তু সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নতুন কোনো নির্বাচনের আয়োজন হয়নি, আর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০০৯ সালে মেয়াদ শেষ হলেও এখনো পদে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের বড় অংশ আজ প্রশ্ন করছে- এই কর্তৃপক্ষ কাকে প্রতিনিধিত্ব করে? জনগণের নাকি কেবল একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর?

২০২৫ সালের বাস্তবতা বলছে, সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার তাগিদ প্রবল হয়েছে বলেই ধারণা করা যায়। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট , অন্যদিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা; এরই মধ্যে তরুণ প্রজন্ম তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা পরিবর্তনের দাবি তুলছে- নতুন নেতৃত্ব, নতুন নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের মাধ্যমে।

একই সময়ে, আন্তর্জাতিক মহল থেকেও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব রাষ্ট্রগুলো এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে- বৈধতা ছাড়া সমর্থন টেকসই হবে না। একই সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার কৌশলও নজরে এসেছে, যা ঐতিহ্যগত কূটনীতির ধারা থেকে পিএ-কে সরে আসতে বাধ্য করছে।

পুরোনো নেতৃত্ব, নতুন প্রশ্ন

২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু তার মেয়াদ ২০০৯ সালে শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আর নতুন কোনো নির্বাচন হয়নি। এর ফলে বহু ফিলিস্তিনি মনে করছেন, পিএ আজ কার্যত একটি নির্বাচিত নয় বরং নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন। দীর্ঘ সময় ধরে একই নেতৃত্ব থাকায় রাজনৈতিক স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, যা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে গভীর দূরত্ব তৈরি করেছে।

বর্তমান পিএ-এর রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে আপনি কী ভাবেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামির খতাবি বলেন, ‘বৈধতা শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে আসে না, সেটা জনগণের আস্থার সাথেও যুক্ত। প্রেসিডেন্ট আব্বাস দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ভোট ছাড়াই শাসন করছেন, যা গণতান্ত্রিক চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো- যুবসমাজের একটি বিশাল অংশ এখন বিশ্বাসই করে না যে তাদের কণ্ঠের কোনো গুরুত্ব আছে। এটা শুধু রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক সংকটও।’

এর সমাধান কী- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘একটি সমন্বিত জাতীয় সংলাপ দরকার, যেখানে হামাস, ফাতাহ, এবং অন্যান্য অংশীদারদের এক টেবিলে বসানো হবে। সময় চলে যাচ্ছে- যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে প্রাসঙ্গিক থাকবে না।’

প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও প্রশাসনিক সংকট

পিএ বর্তমানে প্রশাসনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি, অদক্ষতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির অভিযোগ ব্যাপক। বেশ কয়েকটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এর ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে হতাশা এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি তীব্রতর হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭২ ভাগ ফিলিস্তিনি মনে করেন যে, পিএ বর্তমানে তাদের প্রতিনিধি নয় বরং একটি অলীক প্রতিষ্ঠান, যেটি জনগণের দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গে সংযুক্ত নয়।

যুবসমাজের প্রত্যাশা ও পরিবর্তনের ডাক

২০২৫ সালে সবচেয়ে জোরালো ও দৃশ্যমান পরিবর্তনের আহ্বান এসেছে ফিলিস্তিনের তরুণ প্রজন্ম থেকে। পশ্চিম তীর ও গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় প্রতিবাদ, নাগরিক সমাবেশ ও সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা নেতৃত্বের জবাবদিহিতা দাবি করছে। তারা বলছে, ‘নতুন নেতৃত্ব চাই, নতুন ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’

বিশেষ করে, বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায়, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি সর্বোচ্চ। তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সোচ্চার।

হামাস-পিএ দ্বন্দ্ব ও নির্বাচনী অনিশ্চয়তা

নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের অন্যতম বড় বাধা হলো ফাতাহ (পিএ-এর নেতৃত্বাধীন দল) এবং হামাসের মধ্যে দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। গাজায় ক্ষমতায় থাকা হামাস নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে একাধিকবার আপত্তি জানিয়েছে, আবার পিএ নিজেও পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বাস্তবতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব, একক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ অবিশ্বাসের পরিবেশ নির্বাচনি পথকে ক্রমশ অনিশ্চিত করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক চাপ

পিএ-এর ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ দিন দিন বেড়েই চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, এমনকি কিছু আরব দেশ- যেমন কাতার ও জর্ডান চাচ্ছে পিএ গণতান্ত্রিক বৈধতা অর্জন করুক। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলছে, নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, বিদেশি অনুদান পিএ-এর বাজেটের একটি বড় অংশজুড়ে থাকে। ফলে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করাও সম্ভব নয়। বিশেষ করে পশ্চিম তীরে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কর্মসূচি চালু রাখতে হলে বৈধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা অপরিহার্য।

কূটনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন

২০২৫ সালে পিএ তার কূটনৈতিক নীতি পুনর্বিন্যাস করছে। ঐতিহ্যগতভাবে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর নির্ভর করলেও, বর্তমানে তাদের দৃষ্টি পূর্ব দিকে বিস্তৃত হয়েছে। চীন, রাশিয়া এবং উপসাগরীয় শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের উদ্যোগ এবং রাশিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা এসব নীতিগত পুনর্বিন্যাসের অংশ।

এটি একদিকে পিএ-কে কিছুটা কৌশলগত স্বাধীনতা দিচ্ছে, অন্যদিকে পশ্চিমা দাতাদের চোখে সন্দেহ তৈরি করছে।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, আম্মান মাইসা আরাফাতকে, পিএ-এর কূটনৈতিক নীতির পরিবর্তন আপনি কীভাবে দেখছেন- প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘পিএ বর্তমানে একটি কৌশলগত দ্বন্দ্বে রয়েছে। একদিকে তারা পশ্চিমা অনুদানের ওপর নির্ভরশীল, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে এটি খুব সূক্ষ্ম একটি ভারসাম্য- একদিকে লাভজনক, অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ।’

এই কূটনৈতিক পুনর্বিন্যাস কি সহায়ক হবে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে পিএ কতটা সফলভাবে দুই পক্ষের (পশ্চিমা ও পূর্বের) মধ্যে সমতা বজায় রাখতে পারে। যদি তারা একদিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে তা সাহায্যকারী রাষ্ট্রগুলোর মনোভাবকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এটি পরিষ্কার যে, পিএ এখন আর শুধু ঐতিহ্যগত মিত্রদের ওপর নির্ভর করতে চায় না।’

এক অজানা ভবিষ্যতের সামনে

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ কি আদৌ আছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি পিএ অবিলম্বে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করে, অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংলাপ শুরু করে এবং প্রশাসনিক সংস্কারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারে, তবে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

অন্যথায়, চলমান আস্থার সংকট, রাজনৈতিক বৈধতার অভাব এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাত বা বিভাজনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

২০২৫ সাল ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জন্য এক পরীক্ষার বছর। এই বছরে তারা হয় জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারবে, নয়তো স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলতে পারে। ইতিহাস বলছে- নেতৃত্বের দায় শুধু ক্ষমতার নয়, জবাবদিহিতারও।

তথ্যসূত্র: আলজাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর, ফিলিস্তিন পাবলিক ওপিনিয়ন পোল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

আরবি/এসএস

Link copied!