মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের শেষ বংশধর বলে ইয়াকুব হাবিবউদ্দিন টুসি দাবি করে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি রক্ষা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে এই মর্মে চিঠি লিখেছেন। তার অনুরোধ, এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিক জাতিসংঘ।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এনডিটিভির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজীনগর জেলা (পূর্বের আওরঙ্গাবাদ) কুলদাবাদে অবস্থিত আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে নাগপুরে সহিংসতার প্রায় এক মাস পর এই দাবি এল। সম্প্রতি এই ইস্যুতে উত্তাল হয়েছে মহারাষ্ট্রের নাগপুর। এই পরিস্থিতির মাঝেই নিজেকে ওই সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক দাবি করে জাতিসংঘে চিঠি লিখছেন ইয়াকুব।
এ প্রসঙ্গে ইয়াকুব হাবিবউদ্দিন টুসি বলেন, ওই সমাধি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। এবং ১৯৮ সালের প্রাচীন স্থাপত্য ও পুরাতত্ত্ব আইনের অধীনে রয়েছে। যার ফলে ওই স্মৃতিস্তম্ভ বা তার কাছাকাছি অঞ্চলে কোনো নির্মাণ, পরিবর্তন, ধ্বংস বা খনন অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
এই আইনের কথা স্মরণ করিয়ে জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে ইয়াকুব জানিয়েছেন, ওই কবরস্থানে যাতে কোনোরকম হামলার ঘটনা না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হোক। সিনেমা, সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় এই ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে ভুল উপস্থাপনার কারণে জনমানসে ভুল ধারনা তৈরি হচ্ছে। যার ফলে অযথা প্রতিবাদ, ঘৃণা ছড়ানো ও কুশপুতুল পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে।
চিঠিতে ১৯৭২ সালে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত ইউনেস্কো কনভেনশনে ভারতের স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস, অবহেলা বা বেআইনি পরিবর্তনের যে কোনো কাজ আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।’
এর জেরে গত ১৭ মার্চ নাগপুরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু গোষ্ঠী আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবি জানায়, একটি মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন পোড়ানো হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৯২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইয়াকুব হাবিবুদ্দিন তুসি নিজেকে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জফরের বংশধর বলে দাবি করেন। শুধু তাই নয়, তার দাবি আওরঙ্গজেবের কবর ওয়াকফ সম্পত্তির অধীনে এবং এই সম্পত্তির মুতাওয়াল্লি (তত্ত্বাবধায়ক) তিনি নিজে। গত ১৭ মার্চ নাগপুর উত্তেজনার ঘটনায় ইয়াকুবের আশঙ্কা- এই সম্পত্তি যে কোনো দিন ধ্বংস করা হতে পারে। যার জেরেই এবার আওরঙ্গজেবের কবর বাঁচাতে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হলেন ইয়াকুব।
আপনার মতামত লিখুন :