বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৫ বছর পর এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উষ্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গভীর করার অঙ্গীকার করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দেশ অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দায় সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের সংযোগকে স্বাগত জানিয়ে এসব যোগাযোগকে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের সহায়ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো দ্রুত চূড়ান্তকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ নিয়মিতকরণ এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পাকিস্তান তাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, আর বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তির প্রস্তাবে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা জানায় এবং শিক্ষা খাতে আরও গভীর সহযোগিতার ওপর জোর দেয়।
সংযোগ জোরদারের ক্ষেত্রে করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি নৌযান চলাচল এবং আকাশপথে যোগাযোগ পুনরায় চালু করার বিষয়ে উভয় দেশ সম্মত হয়। ভ্রমণ ও ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণে অগ্রগতির জন্যও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
বৈঠকে ক্রীড়া, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় দেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। সার্কের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বহুপাক্ষিক সহযোগিতার অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে পাকিস্তান কাশ্মীর সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসরণ করার আহ্বান জানায়। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দাও জানায় দুই দেশ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায় অবস্থানকালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকগুলোতে আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বাহ্যিক চাপমুক্ত রাখার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
পাকিস্তানের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁর উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আমনা বালুচ। তিনি পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের প্রত্যাশার কথাও জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, দুই দেশের মধ্যে পরবর্তী পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :