ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমা হামলার কারণে গাজায় শিশুরা এক বেলারও কম খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে বলে জানিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ১২টি বড় আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সাহায্য সংস্থা। তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।
গত ১৮ মাস ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলা ও গত মাসে আরোপিত পূর্ণ অবরোধের ফলে, গাজায় থাকা ৪৩টি সাহায্য সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই তাদের কার্যক্রম বন্ধ বা সীমিত করেছে।
শিশুরা দিনে এক বেলারও কম খাচ্ছে, সবাই কেবল টিনজাত খাবারে নির্ভর করছে বলে জানান অক্সফামের নীতিনির্ধারক বুশরা খালিদি। তিনি আরও বলেন, গাজায় অপুষ্টি এবং ক্ষুধামারির লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স-এর জরুরি সমন্বয়ক আমান্ডে বাজারল বলেন, ‘এটা কোনো মানবিক ব্যর্থতা নয়, বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। গাজার জনগণের বেঁচে থাকার অধিকারের ওপর ইচ্ছাকৃত আঘাত।’
আলজাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, ‘গাজা শহরে শিশু খাদ্য (দুধ) প্রায় নেই বললেই চলে। শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। এমনকি সদ্যজাতদের জন্যও পরিবারগুলো প্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করতে পারছে না।’
মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র
# দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে শিশুরা অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
# ফাদি আহমেদ বলেন, তার ছেলের ফুসফুসে সংক্রমণ ও অক্সিজেন ঘাটতির কারণে মৃত্যু হয়। এক সপ্তাহ হাসপাতালে থেকে শিশুটি মারা যায়।
# ইন্তিসার হামদান জানান, তার নাতি মারা যায় তিন দিন দুধ না পাওয়ার কারণে।
আলজাজিরার তারেক আবু আজযুম বলেন, ‘শুধু অপুষ্টিই নয়, শিশুরা জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে—যার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম গাজায় নেই।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে প্রায় ৬০,০০০ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
এই সংকট আরও গভীর হয়েছে মানবিক কর্মীদের ওপর অব্যাহত হামলার কারণে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০-র বেশি মানবিক কর্মী ও ১,৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন, যা গাজাকে মানবিক সহায়তাকর্মীদের জন্য ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী জায়গা’তে পরিণত করেছে।
সম্প্রতি পাওয়া ১৫ জন ফিলিস্তিনি প্যারামেডিকের গণকবর বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, তবে বহু হামলার খবর প্রকাশও পায় না।
সাহায্য সংস্থাগুলোর আহ্বান
# ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
# গাজার ভেতরে ও সীমান্ত পেরিয়ে নিরাপদ ও বাধাহীন সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।
# বিশ্বনেতাদের উচিত মানবিক সহায়তায় বাধা দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করা।