সম্প্রতি ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি। বিশেষ করে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ দেশ ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হচ্ছে।
সামনে এসেছে গুজরাট, দিল্লি, আসাম, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্যে মুসলিমদের উচ্ছেদ, ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস এবং হয়রানির নানা অভিযোগ।
এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও রাষ্ট্র থেকে ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এমন আহ্বান জানালে নয়াদিল্লি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের এই প্রতিক্রিয়ার পর দক্ষিণ এশীয় বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে— ভারত কি ইসরায়েলের দমনমূলক কৌশল ও ধর্মভিত্তিক নীতির পথেই হাঁটছে?
বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি সরকারের অধীনে ‘এক দেশ, এক ধর্ম’ নীতির বাস্তবায়নের ফলে রাষ্ট্রীয় হিন্দুত্ববাদের প্রভাব বেড়েছে, যা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ব্রিটিশভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর প্রকাশিত এক প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলিমদের বারবার টার্গেট করা হচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে আসাম রাজ্যে দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে বিভিন্ন অভিযানের নামে মসজিদ, মাদ্রাসা এবং মুসলিমদের বাসা-বাড়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও আটক করে বন্দিশিবিরে পাঠানো হচ্ছে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া উত্তরাখণ্ডে ১৭০টিরও বেশি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম নারীদের পোশাক নিয়ে হয়রানি, ধর্মীয় উৎসব পালনে বাধা, মুসলিম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং মসজিদ ভাঙচুরের ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে বলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই পরিস্থিতি শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও উদ্বেগজনক। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও বহুত্ববাদী সমাজ গঠনের পথ থেকে সরে এসে যদি কোনো রাষ্ট্র বিশেষ ধর্মের আধিপত্য কায়েম করতে চায়, তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সামগ্রিক আঞ্চলিক সম্পর্কের ওপর।
আপনার মতামত লিখুন :