ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

সাহায্যের নামে মিয়ানমারে ‘গোপন মিশন’ ভারতের

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১২:০৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশ ভারতের জন্য নতুন কিছু নয়। এ যেন নয়াদিল্লির স্বভাবে পরিণত হয়েছে। তবে সহায়তার নামে গোপনে তথ্য সংগ্রহ- দেশটির নীতি-নৈতিকতার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করেছে। রাডার ফাঁকি দিয়ে এবার ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান ঢুকে পড়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে। আবার সে খবর ফলাও করে প্রচার করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী ও সংবাদমাধ্যম।

সম্প্রতি ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে মিয়ানমার। উদ্ধার কাজে সাহায্যের হাত বাড়ায় প্রতিবেশী দেশগুলো। ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মিয়ানমারে পৌাঁয় ভারত। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ব্রহ্মা’। উদ্ধারকাজে ভারতের বিমান বাহিনী সদস্যরা ‘জিপিএস স্পুফিং’ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সেনারা। এমনকি সাইবার হামলার ঘটনার কথা অকপটে স্বীকার করেছে ভারত। সাহায্যের নামে চলা ‘গোপন মিশন’ সফল হওয়ায় পাইলটদের সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসাও করেছে বিমান বাহিনী।

মিয়ানমারের আকাশে ঢুকে ‘জিপিএস স্পুফিং’ করে ‘গোপন মিশন’ চালানোর ঘটনায় সীমান্ত ও আকাশব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।

গত ১৪ এপ্রিল এই নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেখানেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘এই ধরনের সাইবার আক্রমণের মোকাবেলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা জানি কীভাবে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। জিপিএস স্পুফিংয়ের মধ্যেও অপারেশন চলেছে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে কোনও সমস্যা হয়নি।’

তবে ভারতীয় বিমান বাহিনী তাদের ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য’ বিষয়ে পোস্টে কোনো স্পস্ট তথ্য সংযুক্ত করেনি। এবং ঠিক কী ধরনের সাইবার হামলার মোকাবেলা করা হয়েছে- সেটিও অস্পষ্ট। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ‘জিপিএস স্পুফিং’য়ের করেনি ভারতীয় সেনারা।

‘জিপিএস স্পুফিং’ থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের মান্দালয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ‘নোটিস টু এয়ারমেন’ বা নোটাম জারি করেছিল। এটি প্রকৃতপক্ষে পাইলটদের কাছে পাঠানো এক ধরনের আগাম সতর্কবার্তা। ধারণা করা হচ্ছে নোটাম জারির সুবিধা কাজে লাগিয়েছে নয়াদিল্লি।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র তথ্য, গত ২৯ মার্চ সি-১৩০জে সামরিক মালবাহী বিমানে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে ত্রাণসামগ্রীর প্রথম ব্যাচ নামানো হয়। বিমানটি ইরাবতীর কোলের আকাশসীমায় থাকাকালীন ‘জিপিএস স্পুফিং’-এর কবলে পড়েছিল। ‘অপারেশন ব্রহ্মা’ চালাতে মায়ানমারে মোট ছ’টি সামরিক পরিবহন বিমান পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। এই অপারেশেনে সি-১৩০জে ছাড়াও মার্কিন তৈরি সি-১৭ গ্লোবমাস্টার মালবাহী বিমানও ব্যবহার করেছে ভারত।

চলতি বছরের মার্চে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘জিপিএস স্পুফিং’য়ের অভিযোগ ওঠে। হামাস-হিজবুল্লাহ-হুথিদের আক্রমণ ঠেকাতে সাইবার হামলা চালায় ইহুদি সেনারা। কিন্তু তেল আবিবের ওই নেভিগেশন হামলার প্রভাব পড়ে বেসামরিক বিমান চলাচলে। শুধু তা-ই নয়, যাত্রিবাহী বিমানের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি ‘জিপিএস স্পুফিং’য়ের জন্য মিয়ানমারে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলটদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। এদিকে ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত। যদি ইসরায়েল সত্যিই ‘জিপিএস স্পুফিং’ করেও থাকে তাহলে তেল আবিবের এই মিশনে ভারত সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।

ভারত সরকারের তথ্য অনুসারে, ইহুদিদের ‘জিপিএস স্পুফিং’য়ের প্রভাব মূলত পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অমৃতসর ও জম্মু এলাকায় দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওপিএস গ্রুপ। সেখানে ‘জিপিএস স্পুফিং’-এর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তালিকায় উত্তর-পশ্চিম নয়াদিল্লি এবং পাকিস্তানের লাহোর ও এর আশপাশের এলাকার নাম বলা হয়েছিল।

গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ‘জিপিএস স্পুফিং’য়ের নিরিখে বিশ্বে নবম স্থানে ছিল উত্তর-পশ্চিম দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোর এবং তার আশপাশের এলাকা। ওই এক মাসে সেখানকার ৩১৬টি বিমানের ওঠানামা এর জন্য ব্যাহত হয়।

দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস জানিয়েছে, গত বছর ভারতে ‘জিপিএস স্পুফিং’য়ের ঘটনা ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নিয়ে পাইলট থেকে শুরু করে যাত্রিবাহী বিমানের ৭০ শতাংশ ক্রু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পূর্ব ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণ সাগর এবং এশিয়ার বিরাট এলাকা ‘জিপিএস স্পুফিং’য়ের হটস্পট হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।