সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর অঞ্চলের অবরুদ্ধ শহর এল-ফাশেরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) ভারী গোলাবর্ষণে অন্তত ৩০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
রোববার (২০ এপ্রিল) চালানো এ হামলায় বহু মানুষ আহত হন বলে স্থানীয় অধিকারকর্মীদের বরাতে এএফপি জানিয়েছে।
স্থানীয় প্রতিরোধ কমিটি জানিয়েছে, হামলা ছিল ভয়াবহ এবং তা মূলত আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়। এই প্রতিরোধ কমিটি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ ও সহায়তা সমন্বয় করে থাকে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আরএসএফ–এর মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে, যা ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, বাস্তুচ্যুত করেছে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষকে। জাতিসংঘ এই সংঘাতকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের বর্তমানে দারফুর অঞ্চলের একমাত্র বড় শহর, যেটি এখনো আরএসএফের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। তবে শহরটিকে ঘিরে সামরিক চাপ বেড়েই চলেছে।
গত সপ্তাহেও আরএসএফ এল-ফাশেরে ও তার পাশের দুটি বড় বাস্তুচ্যুত শিবির- জমজম ও আবু শোক- ওপর হামলা চালায়, যার ফলে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায় এবং প্রায় চার লাখ মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়।
আরএসএফ এরই মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে জমজম শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সহায়তা সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক হামলার ফলে দেড় লাখ মানুষ এল-ফাশেরে এবং আরও এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ ৬০ কিলোমিটার দূরের শহর তাওয়িলায় আশ্রয় নিয়েছে। এই শহরগুলো দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় রয়েছে, কিন্তু মানবিক সহায়তা কার্যত থমকে গেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগলোর সঙ্গে ফোনালাপে উভয়পক্ষই সহায়তা প্রবেশে সম্মতি দিলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে যে, তারা ক্ষুধাকে একটি ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
দারফুরের সংকটের ইতিহাস: ২০০৩ সাল থেকে দারফুর অঞ্চল সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। আরব সমর্থিত মিলিশিয়া এবং সরকারবিরোধী জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা চলছে।
আরএসএফ সম্পর্কে: র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস মূলত দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত সাবেক জানজাওয়িদ বাহিনীর উত্তরসূরি, যারা এখন একটি আধাসামরিক শক্তি হিসেবে সুদানে ব্যাপক ক্ষমতা অর্জন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সুদানে জরুরি অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, যদিও কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।