দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি দেশ থেকে সৌর প্যানেল আমদানির উপর ৩ হাজার ৫২১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জানিয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর জ্বালানি সংকট থেকে শিক্ষা এখনও পুরোপুরি নেওয়া হয়নি।
শুল্কভুক্ত দেশগুলো হলো- কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম। খবর বিবিসি
গত বছরে মার্কিন সৌর প্যানেল নির্মাতারা চীনা কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকিযুক্ত, সস্তা পণ্য দিয়ে বাজার সয়লাব করার অভিযোগ এনেছিল। সেসময় তদন্তে নামে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। তবে তদন্ত শুরু হলে কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে নতুন শুল্ক ঘোষণা করা হয়।
আগামী জুন মাসে মার্কিন সরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন শুল্কের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তবে দেশ ও কোম্পানি ভেদে কাউন্টারভেলিং ও অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের তারতম্য হবে।
কম্বোডিয়ার পণ্যগুলোতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫২১% শুল্ক আরোপ করা হবে। কারণ এর কোম্পানিগুলো মার্কিন তদন্তে সহযোগিতা করেনি। অন্যদিকে চীনা নির্মাতা জিনকো সোলারের মালয়েশিয়ায় তৈরি পণ্যগুলোর উপর ৪১ শতাংশের এরও বেশি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ত্রিনা সোলারের থাইল্যান্ডের পণ্যগুলোতে ৩৭৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার।
এ বিষয়ে বিবিসি মন্তব্যের অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করলে কোনো সংস্থাই তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
২০২৪ সালের ওই মামলাটি দায়ের করেছিল কোরিয়ান কোম্পানি হানওয়া কিউসেলস, অ্যারিজোনা-ভিত্তিক ফার্স্ট সোলার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি ছোট সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। তারা মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে কারখানা স্থাপনকারী চীনা কোম্পানিগুলোকে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি অনুযায়ী উৎপাদন খরচের কম দামে প্যানেল সরবরাহ করার অভিযোগ এনেছে।
তবে, সোলার এনার্জি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ট্রেড গ্রুপসহ সমালোচকরা বলেছেন, শুল্ক আরোপ মার্কিন সৌর উৎপাদনকারীদের ক্ষতি করবে। কারণ তারা মার্কিন কারখানায় প্যানেলে একত্রিত করা আমদানিকৃত সেলের দাম বাড়িয়ে দেবে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার প্রধান ফাতিহ বিরল জ্বালানি নিরাপত্তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফিনান্সিয়াল টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন থেকে পাওয়া শিক্ষা এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য তিনটি সুস্পষ্ট নিয়ম রয়েছে- সরবরাহের বৈচিত্র্য, কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত রাজনৈতিক সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
জ্বালানি ভর্তুকি ও নিয়মকানুন পরিবর্তন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘন ঘন শুল্ক ঘোষণায় বাণিজ্য যুদ্ধ বেধে গেছে। ফলে বাজারগুলো অস্থির হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরু থেকে আরোপিত শুল্ক এড়াতে অনেক চীনা কোম্পানি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আমেরিকান অ্যালায়েন্স ফর সোলার ম্যানুফ্যাকচারিং ট্রেড কমিটি। তারাই প্রথম মার্কিন সরকারকে তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছিল।
অ্যালায়েন্সের প্রধান পরামর্শদাতা টিম ব্রাইটবিল বলেছেন, ‘এটি আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের জন্য একটি নির্ণায়ক বিজয় এবং আমরা দীর্ঘদিন ধরে যা জানি তা নিশ্চিত করে: চীনা-সদর দপ্তরযুক্ত সৌর কোম্পানিগুলো সিস্টেমের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’
মার্কিন আদমশুমারি ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে আমেরিকা চারটি দেশ থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের সৌর সরঞ্জাম আমদানি করেছিল। যদিও পরিকল্পিত শুল্ক মার্কিন সৌর প্যানেল নির্মাতাদের সাহায্য করার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এর অর্থ ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত খরচও হতে পারে, যারা সস্তা সৌর পণ্য পেয়েছিল।
এর মধ্যেই আরোপিত অন্যান্য শুল্কের সঙ্গে এই শুল্কও আরোপ করবে ট্রাম্প প্রশাসন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর শেষ করার মাত্র কয়েক দিন পরেই পরিকল্পিত শুল্ক ঘোষণা করা হলো। সফরটির উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘একতরফা বর্বরতা’ প্রতিরোধে দেশগুলোকে উৎসাহিত করা।
ট্রাম্প এখন পর্যন্ত চীন থেকে আমদানির ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করেছেন। বর্তমানে অন্য দেশগুলো জুলাই পর্যন্ত ১০ শতাংশের শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে। গত সপ্তাহে তার প্রশাসন বলেছে, যখন নতুন শুল্ক বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে, তখন কিছু চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ২৪৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ কর আরোপের পাল্টা জবাব দিয়েছে। এবং ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং।
আপনার মতামত লিখুন :