সেলহা হোসেইনের হৃৎপিণ্ড দুর্লভ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে একটি কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে দেন। হৃদপিণ্ডটি ব্যাটারিচালিত পাম্পের মাধ্যমে চলে, যেটি একটি ছোট ব্যাগে বহন করতে হয়।
সময়টা ২০১৭ সালের জুন মাস। হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হতে থাকে সেলহার। সে সময় তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে এসেক্সের ক্লেহলে পারিবারিক ডাক্তারের কাছে পৌঁছান।
পরে সেখান থেকে স্থানীয় হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা সেলহাকে পরীক্ষা করে বলেন, তার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এ সমস্যায় কারণে চিকিৎসকরা তার শরীরে একটি কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেন। এ সময় ডাক্তাররা তাকে বলেছিলেন, যতদিন তিনি একজন হৃৎপিণ্ডের ডোনার না পাচ্ছেন, ততদিন তাকে এটি বয়ে বেড়াতে হবে।
সেই থেকে সেলহা হোসেইন তার হৃৎপিণ্ড ব্যাগেই বহন করেন।
সেলহা হোসেইন বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স যখন ছয় বছর, একদিন সকালে বুকে ভয়াবহ ব্যথা শুরু হয়। সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। আমি বুঝতে পারছিলাম, এটা মারাত্মক কিছু হয়েছে।’
‘দ্রুত হাসপাতালের যাওয়ার পর চিকিৎসকরা জানালেন, আমার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু আমি এতটাই অসুস্থ ছিলাম, তারা আমাকে একটি কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সংযোজন করে দিতে বাধ্য হন।’
তিনি জানান, নানা টিউবের মধ্য দিয়ে শরীরের রক্ত এ কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডে এসে পরিশোধিত হয়ে আবার টিউবের মাধ্যমে শরীরে চলে যায়। শরীরের ভেতরেও এরকম প্লাস্টিকের কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড রয়েছে, যেগুলো সত্যিকারের হৃৎপিণ্ডের মতোই রক্ত পাম্প করে শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।
সেলহা হোসেইন বলেন, এই হৃদপিণ্ডই এক টুকরো আমি। এটা শুধু অঙ্গ নয়- এটা আমার যুদ্ধ, আমার বেঁচে থাকার ইতিহাস।’
সেলহার মতো যুক্তরাজ্যে কয়েক শ রোগী আছেন, কিন্তু সেলহা যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী যার শরীরের বাইরে একটি কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড লাগানো হয়েছে।
তবে বেদনার বিষয় হলো, এসব রোগী হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তারা ডোনার পাচ্ছেন না।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ড. রিচার্ড ফিনলে বলেন, ‘এ ঘটনা কেবল প্রযুক্তির অগ্রগতি নয়, বরং মানুষের মানসিক শক্তির এক দুর্দান্ত উদাহরণ।’
আপনার মতামত লিখুন :