বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

কূটনৈতিক সংঘাতে ভারত-পাকিস্তান

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

কূটনৈতিক সংঘাতে ভারত-পাকিস্তান

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসারি কূটনৈতিক সংঘাতের পথে ভারত। কাশ্মীরের পেহেলগামে ‘সন্ত্রাসী’ হামলার জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আর ‘দোষী’ হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিয়েছে একগুচ্ছ পদক্ষেপ। যা উভয় দেশের জন্য আত্মঘাতী বলে মনে করছেন কূটনৈতিকরা।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে নয়াদিল্লিতে। শেষে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রীপরিষদ কমিটির ওই বৈঠকে পাকিস্তানের উপর বড় কূটনৈতিক ‘অ্যাকশনের’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা থেকে শুরু করে কূটনাতিকসহ পাঁচটি পদক্ষেপের বিষয়ে ঐকমত্য হন কমিটির সদস্যরা। এর মাধ্যমে পেহেলেগামের ‘সন্ত্রাসী’ হামলার জবাব কূটনৈতিক উপায়ে দেওয়া শুরু করল নয়াদিল্লি।

তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি পাকিস্তান। যদিও পেহেলগামের হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সংযোগ নেই দাবি করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তার দাবি, ভারতের কথিত রাজ্যগুলোতে— নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, মণিপুর এবং দক্ষিণে বিদ্রোহ চলছে। এগুলো বিদেশি কোনো দেশের হস্তক্ষেপ নয়, স্থানীয় বিদ্রোহ।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানান, পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বন্ধ না করা পর্যন্ত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত থাকবে। তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধে করে দেওয়া হয়েছে ওয়াঘা-আট্টারি সীমান্ত। যারা বৈধ অনুমোদন নিয়ে আট্টারি সীমান্ত অতিক্রম করেছেন, তাদের আগামী ১ মের মধ্যে শুধুমাত্র এই সীমান্ত দিয়ে ফিরে আসা বা যেতে দেওয়া হবে।

এছাড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। যতই জরুরী প্রয়োজন হোক, কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে আর ভিসা দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে যে সকল ভিসা জারি করা হয়েছে, সেগুলোকে বাতিল বলে গণ্য করা হবে। যে সকল পাকিস্তানি নাগরিক এই মুহূর্তে ভারতে আছেন, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

এই বিধিনিষেধ থেকে বাদ যায়নি পাকিস্তানি কূটনীতিকরাও। তাদের ভারত ছাড়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনে থাকা সকল প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদেরও অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হবে। সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের পদগুলো বাতিল বলে গণ্য করা হবে বলে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। গত কয়েক মাস যাবত এ অঞ্চল নিয়ে দু’দেশের মধ্যে টানাপোড়েনে কিছুটা ‘শীতল’ থাকলেও ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের কূটনীতি। তবে পেহেলগামের এই ঘটনার পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে মোদী সরকার। ঘটনার একদিন পরই পাঁচটি বড় কূটনৈতিক অ্যাকশন নিলো দেশটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নৃশংস হামলার জবাবে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা থাকতে পারে। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজ’-এর (ক্লস) পরিচালক তারা কার্থা বলেন, ‘এটি একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা। আমরা একে সেভাবেই দেখছি। এটা এমন এক সময় ঘটল, যখন কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান একটি বিতর্কিত ভাষণ দিয়েছিলেন।’

গত ১৬ এপ্রিল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এক বক্তব্যে ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের অনুঘটক দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। এবং মুসলমানদের ‘হিন্দুদের থেকে আলাদা পরিচয়’–এর কথা জোর দিয়ে বলেন তিনি।

তারা কার্থার মতে, পেহেলগামে যা ঘটেছে, তা মুনিরের ওই বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ধারার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শুধু পাকিস্তান যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলার কঠোর নিন্দা করে এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলেই একটি বড় ধরনের সংকট এড়ানো সম্ভব হতে পারে।’

পাকিস্তান সরকার বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভোরে এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘ভারত অধিকৃত অবৈধ জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’

ভারত ও পাকিস্তান—উভয়েই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে এবং উভয় দেশ কাশ্মীরের একটি করে অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। পাকিস্তানের এই বিবৃতি ভারতের জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, সরকার এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশবাসীর চাপের মুখে রয়েছে।

কেউ কেউ হঠাৎ করে উত্তেজিত প্রতিক্রিয়ার দেখানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।

দিল্লিভিত্তিক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবা নকভি বলেন, ভারতের তুলনায় পাকিস্তান অনেক বেশি অস্থিতিশীল। তাই ভারতের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ভাবনাচিন্তাপূর্ণ ও স্থির। তিনি বলেন, ‘ভারতের ক্ষেত্রে অনেকেই ভাবেন, বিজেপি সরকার হয়তো বিমান থেকে বোমা ফেলবে, আর তাহলেই সব প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়।’

কাশ্মীরের অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অঞ্চলটির মোট জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ যোগ করে। এছাড়া পর্যটকের ভিড়কে ভারতের শাসকদল বিজেপি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও ব্যবহার করে—তারা বলে, কাশ্মীরে শান্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পেহেলগামে হামলার আগেও কাশ্মীরের পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক ছিল না।

২০১৯ সালে ভারতের সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন কিছু আইন দিয়ে, যেগুলোর আওতায় কাউকে বিচারের আগেই দীর্ঘদিন আটক রাখা যায়।

গত বছরের অক্টোবরে প্রায় এক দশক পর কাশ্মীরে আবার স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত এক প্রশাসক নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়। সেই নির্বাচনে স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয় প্রাদেশিক রাজনীতিক ওমর আবদুল্লাহ বড় জয় পান। তবে তিনি প্রকৃতপক্ষে খুব সীমিত ক্ষমতা পান। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনেক বড় বড় সিদ্ধান্তের ক্ষমতা নিজের হাতে রেখেছেন।

Link copied!