ভারতের কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হবার পর, পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। সর্বশেষ দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সীমান্ত ক্রসিংও বন্ধ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
এছাড়া, নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত একাধিক পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং পাকিস্তানে থাকা ভারতীয় কূটনীতিকদের দেশে ফেরত ডাকা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত এই হামলার জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, তারা পর্যটকদের প্রাণহানিতে উদ্বিগ্ন। এদিকে সশস্ত্র সংগঠন ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকে বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে প্রধান স্থল সীমান্তটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ১৯৬০ সালের ইন্দাস পানি চুক্তি, যার আওতায় উভয় দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী ব্যবস্থার জল ভাগাভাগি করে, তা স্থগিত করা হয়েছে যতক্ষণ না পাকিস্তান তথাকথিত ‘সীমান্ত পেরিয়ে আসা সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থন বন্ধ করে।
কাশ্মীরে এই হামলাকে সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী, সেনা ও পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করে হামলাকারীদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি, হেলিকপ্টার ব্যবহার এবং পুরোনো সন্দেহভাজন জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।
‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামের সংগঠনটি সামাজিক মাধ্যমে জানায়, তারা এই হামলার দায় নিচ্ছে এবং দাবি করে যে, তারা ৮৫,০০০-এর বেশি ‘বহিরাগতদের’ বসবাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা আরও দাবি করে, নিহত পর্যটকেরা ‘সাধারণ পর্যটক’ নয় বরং ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে এই দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
২০১৯ সালে কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর থেকে এই অঞ্চলে হিন্দুদের লক্ষ্য করে বেশকিছু প্রাণঘাতী হামলা হলেও এবারই প্রথম পর্যটকদের সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করা হলো।
ভারত সরকারের প্রচারের ফলে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলটি প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকর্ষণ করলেও, এই হামলার পর তা আবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :