ইসরায়েলের টানা ১৮ মাসের সামরিক অভিযান এবং দুই মাসের অবরোধ ও অনাহারের পরও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস আত্মসমর্পণের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি এখন ফিলিস্তিনি জাতিসত্তার প্রতীক হয়ে উঠেছে, আর হামাসের পরাজয় মানে হবে গোটা ফিলিস্তিনি স্বপ্নের বিলুপ্তি।
ইসরায়েল সম্প্রতি একটি প্রস্তাব দেয় যাতে বলা হয়, হামাস যদি তাদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তাহলে ৪৫ দিনের জন্য খাবার ও পানি সরবরাহ করা হবে এবং হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে। কিন্তু হামাস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব দুটি শর্তে অটল থাকে- ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি।
হামাস পাল্টা প্রস্তাবে জানায়, তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তির বিনিময়ে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে পারে। তবে তারা অস্ত্র ত্যাগ বা প্রতিরোধ বন্ধ করবে না।
নেতানিয়াহুই প্রধান বাধা
এই যুদ্ধের সমাপ্তিতে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একাধিকবার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর চুক্তি করেও তিনি নিজেই তা ভঙ্গ করেছেন। অনেকেই মনে করেন, এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান রক্ষা করা।
গাজা এখন ‘পবিত্র ভূমি’
এই যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য শুধু একটি সামরিক লড়াই নয়, বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। গাজার প্রতিটি পরিবার কোনো না কোনোভাবে এই সংঘাতের শিকার হয়েছে- সেটা আত্মীয় হারানো হোক, কিংবা ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়া। এই জাতিগত যন্ত্রণা এখন তাদের মনোবলে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলের দখলদার নীতি প্রতিরোধকে আরও যুক্তিসঙ্গত করছে
গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে ইসরায়েলের দমন-পীড়ন এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াস ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকে আরও বৈধতা দিচ্ছে। আল-আকসা মসজিদে ইহুদি উপাসনার বৃদ্ধি ও মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
জনমতের যুদ্ধেও এগিয়ে হামাস
যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশে ইসরায়েলের প্রতি জনসমর্থন কমছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন জনগণের ৫৩ শতাংশ এখন ইসরায়েলের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে- যা ৭ অক্টোবরের আগেও এতটা ছিল না। হামাসকে অনেকেই এখনো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করলেও, তাদের প্রতিরোধের প্রেক্ষাপট অনেকের মনোভাব পরিবর্তন করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের আত্মসমর্পণ মানে হবে গোটা ফিলিস্তিনি জাতিসত্তার পরাজয়। গাজা এখন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি একটি আদর্শ ও প্রতিরোধের প্রতীক। আর এই প্রতিরোধ শুধু হামাসের নয়, বরং গোটা ফিলিস্তিনি জনগণের।
ইসরায়েল যদি এই যুদ্ধকে সামরিকভাবে শেষ করতে চায়, তাহলে তা তাদের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলবে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ- এখনই ইসরায়েলের উচিত গাজা থেকে সরে আসা, কারণ ৭ অক্টোবরের পর তাদের অজেয়তার ভাবমূর্তি ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :