কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পাহেলগামে সম্প্রতি এক রক্তক্ষয়ী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও চরম উত্তেজনার দিকে ধাবিত হয়েছে। ভারত এ হামলার জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তান সরকার এই হামলাকে ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘ভারত নিজেরাই এই হামলার নাটক সাজিয়ে দোষ পাকিস্তানের ঘাড়ে চাপাতে চায়।’
মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) এ হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পাকিস্তান জরুরি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক আহ্বান করেছে। এই হামলার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করা হলে কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
জানা গেছে, ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, এটি একটি ‘উচ্চ গুরুত্বের’ বৈঠক, যা সাধারণত কেবল বিদেশি হুমকি বা বড় ধরনের হামলার পর ডাকা হয়।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত বুধবার একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে- যার মধ্যে রয়েছে পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, প্রধান স্থলসীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল। এই সিদ্ধান্তে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পেহেলগামের হামলায় নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং ১ জন নেপালি নাগরিক। অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা পর্যটকদের বাস লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে এই প্রাণহানি ঘটে। ভারতের পুলিশ বলছে, এটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কাজ। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি।
একটি নতুন ও পূর্বে অজানা গোষ্ঠী ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’- এ হামলার দায় স্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেয়। তারা দাবি করে, নিহত ব্যক্তিরা ‘সাধারণ পর্যটক নয়’, বরং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। যদিও এ দাবির সপক্ষে এখনো কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের কৌশল ভারতের আগেও দেখা গেছে।’
কাশ্মীর অঞ্চলটি ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতশাসিত কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে, যার ফলে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ভারত এই বিদ্রোহকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে বিবেচনা করে, যেখানে পাকিস্তান এটিকে ‘বৈধ স্বাধীনতাকামী আন্দোলন’ হিসেবে দেখে।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে, যদিও মাটিতে সেই আহ্বানের প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন :