ভারতশাসিত কাশ্মীরের পর্যটননগরী পাহেলগামের হামলাকে গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) সন্দেহভাজন সশস্ত্র বিদ্রোহীরা আকস্মিক গুলিতে কমপক্ষে ২৬ জন বেসামরিক পর্যটককে হত্যা করে। নিহতরা কেউই সেনা সদস্য ছিলেন না, বরং তারা ছুটি কাটাতে আসা সাধারণ মানুষ। এই হামলার তাৎপর্য এখানেই যে এটি শুধু সহিংসতা নয়, বরং কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফেরানোর প্রচেষ্টার ওপর এক সরাসরি আঘাত।
এ হামলার জেরে ভারত সরকার বেশকিছু কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষামূলক সিদ্ধান্ত দ্রুত নিয়েছে। সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেওয়া, পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কারসহ নানা সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন- যে জবাব শুধু হামলাকারীদের নয়, বরং পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রশ্ন নয় ‘ভারত জবাব দেবে কি না’, বরং কবে, কীভাবে এবং কতটা বড় মাত্রায় দেবে- তা নিয়ে। কারণ, অতীত ইতিহাস বলছে, ভারত একাধিকবার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ও বিমান হামলার মাধ্যমে জবাব দিয়েছে। বিশেষত ২০১৬ সালের উরি হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা ঘটনার পর।
সামরিক বিশ্লেষক শ্রীনাথ রাঘবনের মতে, ‘এই ঘটনার জবাবে সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়া আসা অবশ্যম্ভাবী। সেটা হতে পারে সীমান্ত পেরিয়ে অভিযান বা টার্গেটেড এয়ারস্ট্রাইক।’ তবে তিনি সতর্ক করেন, দুই পক্ষেরই একটি ভুল সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে।
পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যানের ভাষায়, ‘ভারত যে প্রতিক্রিয়াই বেছে নিক না কেন, তা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব ফেলবে। কারণ জনগণের চাপ রয়েছে শক্ত জবাবের পক্ষে।’ তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার কৌশলগত সুবিধার পাশাপাশি বিপজ্জনক পরিণতিও হতে পারে।’
ভারত যদি ২০১৯ সালের মতো আবার বিমান হামলা চালায়, তাহলে পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে দুই দেশই যখন পারমাণবিক শক্তিধর, তখন এমন প্রতিক্রিয়া সহজেই পূর্ণমাত্রার সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ভারতের সামনে সম্ভাব্য পদক্ষেপ
- নিয়ন্ত্রণ রেখায় পুনরায় গোলাগুলি চালু করা
- সীমিত পরিসরে বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- গোপন অভিযানের মাধ্যমে প্রতিশোধ
তবে প্রতিটি পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর সঙ্গে রয়েছে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা। বিশেষ করে এমন সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েল-ইরান পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত।
কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে রাঘবন বলেন, ‘এই হামলার সময়টা ছিল অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পর্যটন মৌসুমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এত বড় ফাঁক থাকার বিষয়টি সরকারের জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং পাকিস্তানের সম্ভাব্য জবাব- উভয়ই এমন এক পথে ধাবিত হতে পারে, যা আবারও দক্ষিণ এশিয়াকে সংঘাতের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
আপনার মতামত লিখুন :