কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। এ হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের ওপর দায় চাপাচ্ছে ভারত। যদিও পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা অস্বীকার করেছে। তবু পাকিস্তানের প্রতি ক্ষুব্ধ ভারত।
এ ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ পদক্ষেপও নিয়েছে দিল্লি। ক্রমেই পারস্পরিক ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দেশ দুটির ‘সামরিক শক্তি’। ভারত না পাকিস্তান, কোন কোন দেশ সামরিক শক্তিতে এগিয়ে?
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে উভয় দেশ। এ সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে কাশ্মীর অঞ্চল নিজেদের দখলে রাখা।
আর এ নিয়েই উভয় দেশ নিজেদের সামরিক শক্তি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) মতে, ২০১৮ সালে ভারতের সামরিক খাতে ৫৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে, যা তাদের জিডিপির ২.১ শতাংশ। এর মধ্যে ১.৪ মিলিয়ন ডলার ছিল সক্রিয় সেনাসদস্যদের জন্য।
আইআইএসএস বলছে, একই বছর পাকিস্তান সামরিক খাতে ১১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে, যা তাদের জিডিপির ৩.৬ শতাংশ ছিল। এ বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ জন সেনা দস্যের জন্য। দেশটি ওই বছরই বিদেশি সামরিক সহায়তা হিসেবে ১০০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের শক্তিধর সামরিক বাহিনীর তালিকায় চার নম্বরে আছে ভারত। আগেরবারও ভারত চার নম্বরেই ছিল। শুধু ২০২৪ সালে নয়, ২০০৬ সাল থেকেই লাগাতার চতুর্থ স্থানে আছে দেশটি। ২০০৫ সালে ভারত পঞ্চম স্থানে ছিল।
একই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তান এ তালিকার ১২ নম্বরে রয়েছে। এদিকে, দেশটি ২০২৪ সালেও ৯ নম্বরে ছিল।
ভারত-পাকিস্তানের সামরিক শক্তি নিয়ে তাদের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্টে উঠে এসেছে কয়েকটি পর্যালোচনা।
স্থলভাগ
ভারত: ‘জিএফপি’র রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ৪,২০১টি ট্যাঙ্ক আছে। গাড়ি আছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি। সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারির সংখ্যা হলো ১০০। আর ২৬৪টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএসআরএস) আছে ভারতের হাতে।
পাকিস্তান: ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের ট্যাঙ্কের সংখ্যা ২,৬২৭টি। ১৭ হাজার ৫১৬টি গাড়ি আছে। সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারি আছে ৬৬২টি। মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের (এমএসআরএস) সংখ্যা ৬০০।
সামরিক কর্মী
ভারত: সামরিক কর্মীর সংখ্যা পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের দ্বিগুণ। দেশটির ১৪,৫৫,৫৫০ জন সক্রিয় সেনাসদস্য রয়েছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের সামরিক কর্মী ৬,৫৪,০০০ জন। ভারতের তুলনায় এই সামরিক শক্তিকে তেমন সুসংহত মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।
বিমান বহর
ভারত: দেশটির বিমান বাহিনীতে ২,২২৯টি বিমান রয়েছে। এ ছাড়া দেশটির অত্যাধুনিক ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার এবং পরিবহন বিমান রয়েছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের হাতে মোট ১,৩৯৯টি এয়ারক্রাফট আছে। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ৩২৮ এবং হেলিকপ্টার আছে ৩৭৩টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা হলো ৫৭।
নৌ-শক্তি
ভারত: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ২৯৩টি ‘অ্যাসেট’ আছে। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সংখ্যা দুটি। ডেস্ট্রয়ার আছে ১৩টি। ১৪টি ফ্রিগেট আছে। সাবমেরিন আছে ১৮টি। এ ছাড়া প্যাট্রোলিং ভেসেলের সংখ্যা ১৩৫টি।
পাকিস্তান: দেশটির ‘অ্যাসেট’-র সংখ্যা ১২১টি। তবে একটিও এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এবং ডেস্ট্রয়ার নেই। ৯টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন এবং ৬৯টি প্যাট্রোলিং ভেসেল আছে ইসলামাবাদের হাতে।
প্রতিরক্ষা বাজেট
ভারত: ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। ভারত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে ৫.৯৪ ট্রিলিয়ন রুপি (প্রায় ৭৩.৮ বিলিয়ন) বরাদ্দ করেছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ৬.৩৪ বিলিয়ন। এই বিশাল বাজেট ভারতকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ক্রয়ে সাহায্য করে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি
ভারত: ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে অগ্নি, পৃথ্বী, ব্রহ্মোস, নির্ভয়, এবং প্রলয়-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত। অগ্নি-৫ হলো ভারতের সবচেয়ে দূরপাল্লার আইসিবিএম, যা ৫,০০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। ভারত একটি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা দুটি স্তরে ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিডিএ) এবং অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি)।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে শাহীন, ঘুরি, বাবুর, এবং রাদ-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত। শাহীন-III হলো পাকিস্তানের সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যা ২,৭৫০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম।
পাকিস্তান MIRV (মাল্টিপল ইন্ডেপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবলে রে-এন্ট্রি ভেহিকল) প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যা একটি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।