কাশ্মীরের পহেলগামের পর্যটনকেন্দ্রে হঠাৎ গর্জে উঠল বন্দুক, রক্তাক্ত হল নিরীহ পর্যটকরা। ২৬ জন প্রাণ হারানোর এই ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত। ভারত একতরফাভাবে পাকিস্তানিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে, সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করেছে, সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। এর পাল্টা হিসেবে ইসলামাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে আকাশসীমা, বাণিজ্য, এমনকি ওয়াঘাহ সীমান্তও। বাতিল করা হয়েছে সিমলা চুক্তিও।
এই ভয়াবহ উত্তেজনার মাঝেই বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি দাবি করেন, ‘পাকিস্তানের শহরগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত।’ তার ভাষায়, ভারতের এমন পরিকল্পনার ‘বিশ্বস্ত তথ্য’ রয়েছে সরকারের কাছে।
একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ভারত যদি পাকিস্তানের কোনো শহরে হামলা বা তৎপরতা চালায়, কিংবা কোনো পাকিস্তানি নাগরিকের ক্ষতি করে, তবে পাকিস্তানও সমপর্যায়ের জবাব দেবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। কোনো আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নত করব না।’
একইসঙ্গে ভারতের কাশ্মীর নীতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা বিশ্বজুড়ে সব সন্ত্রা'সী কার্যক্রমের নিন্দা জানাই, তবে আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের আছে। ভারত যদি পাকিস্তানের মাটিতে কোনো অভিযান চালানোর কথা চিন্তা করে, তাহলে তার চরম মূল্য দিতে হবে।’
এদিকে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানির প্রবাহ যদি ভারত একতরফাভাবে বন্ধ বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়, তবে সেটিকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে ভারতের কড়া কূটনৈতিক পদক্ষেপ। পহেলগামের ঘটনার পর ভারত শুধু ভিসা স্থগিত করেনি, বরং ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তিও বাতিল করে দিয়েছে, যেটি এতদিন দুই দেশের পানি ব্যবস্থাপনায় একটি ‘লাইফলাইন’ হিসেবে কাজ করছিল। পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, পাকিস্তানভিত্তিক ‘লাশকার-ই-তৈবা’র ছদ্মবেশী গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ভারতের তরফে নিরাপত্তা সূত্র জানায়, বেইসারান নামের মনোরম উপত্যকায় ওই হামলার সময় ছয়জন বিদেশি সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর পোশাকে পর্যটকদের কাছে গিয়ে ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায় এবং নাম ও কোরআনের আয়াত শোনার পর পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি ছোড়ে। এই ঘটনাকে কাশ্মীরে ২০১৯ সালের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অক্রমণ বলে উল্লেখ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
পাকিস্তান এই পরিস্থিতিতে করাচি উপকূল থেকে সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল টেস্টের নোটিশও দিয়েছে ২৪-২৫ এপ্রিলের মধ্যে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এই কূটনৈতিক উত্তেজনা এখন রীতিমতো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। আর এরই মাঝে পাকিস্তানের অভিযোগ—ভারতের এই পরিকল্পনা, যা সিভিলিয়ান টার্গেট করে হত্যার মতো অপারেশন চিন্তা করছে—তা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের ‘চূড়ান্ত লঙ্ঘন’।
পূর্ব দিকের এই উত্তাল ঝড় কেবল সীমান্তে নয়, বিশ্বের কূটনৈতিক পরিমণ্ডলেও আলোড়ন তুলেছে। পরিস্থিতি এখন এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সামান্য উত্তেজনাও বৃহত্তর সংঘা'তের দিকে ঠেলে দিতে পারে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীকে।
আপনার মতামত লিখুন :