কাশ্মীরের পেহেলগামে রৌদ্রোজ্জ্বল এক বিকেলে যখন ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপর আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র হামলাকারীরা, তখন যেন ফিরল এক ভীতিকর অতীত।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’—২০১৯ সালে আত্মপ্রকাশকারী একটি সশস্ত্র সংগঠন, যারা এরই মধ্যে কাশ্মীরের সশস্ত্র সংঘাতের মানচিত্রে নতুন করে জায়গা করে নিয়েছে।
পেহেলগামের তৃণভূমিতে অন্তত ২৬ জন পর্যটককে গুলিতে হত্যা ও ডজনখানেককে আহত করার পর টিআরএফের নাম আবারও উঠে এসেছে শিরোনামে।
সংগঠনটির জন্ম হয়েছিল ভারত সরকারের কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের ঠিক পরপরই। ‘টিআরএফ’-এর দাবি, তারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাশ্মীরে ‘বহিরাগতদের’ স্থায়ী বসতির অনুমোদনের বিরুদ্ধে লড়ছে।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে তারা সরাসরি হুঁশিয়ারি দেয়, ‘যারা এখানে অবৈধভাবে বসতি গড়বে, তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানো হবে।’
যদিও মঙ্গলবারের হামলার শিকাররা কেউই সেই তথাকথিত ‘বসতি স্থাপনকারী’ ছিলেন না, বরং নিছক ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
টিআরএফের ব্যতিক্রম নাম ও কৌশল এরই মধ্যে গোয়েন্দাদের দৃষ্টি কেড়েছে। অন্য বিদ্রোহী সংগঠনের নামের বিপরীতে, এতে ইসলামী পরিচয়ের ইঙ্গিত নেই। বরং ‘প্রতিরোধ’ শব্দটি কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের দাবি তুলে ধরছে।
ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার ছদ্মবেশী শাখা হতে পারে এই সংগঠনটি। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, বরং হামলার নিন্দাও জানিয়েছে।
২০১৯ সালের পর থেকে টিআরএফ ছোটখাটো হামলার মাধ্যমে নিজেদের জানান দিতে থাকে—টার্গেট কিলিং, সাংবাদিকদের হুমকি, অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীদের হত্যা ইত্যাদি। ২০২০ সালে তারা কয়েকজন কাশ্মীরি সাংবাদিকের নামে হিটলিস্ট প্রকাশ করে, যার ফলশ্রুতিতে অন্তত পাঁচজন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন।
কাশ্মীরের ‘প্রিন্স অফ ওয়ার’ নামে খ্যাত বুরহান ওয়ানির ছায়াও যেন টিআরএফে ফিরে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আধুনিক চেহারার প্রচারণা এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ—দুটি পথেই তারা সক্রিয়। তবে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীও বসে নেই। টিআরএফের নেতা আব্বাস শেখ ২০২১ সালে নিহত হন এবং এরপর অনেক যোদ্ধাই পালিয়ে যান পার্বত্য জঙ্গলে। ২০২৩ সালে সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত সরকার।
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—পেহেলগামের মতো পর্যটনকেন্দ্রিক এলাকায় এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে কি আদৌ ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলা সম্ভব? নাকি এতে আবারও জেগে উঠছে সেই পুরোনো আতঙ্ক, যা কাশ্মীরকে শুধু রক্তাক্তই করে?
যতই টিআরএফ নিজেদের ‘রেজিস্ট্যান্স’ বলুক, আক্রমণের পর পর্যটকেরা যখন একে একে কাশ্মীর ছাড়ছেন, তখন নিঃসন্দেহে নতুন করে প্রশ্ন জাগছে—এই ‘প্রতিরোধ’ আদৌ কার বিরুদ্ধে, আর এর শেষ কোথায়?