কাশ্মীরের পেহেলগামে বৈসরন উপত্যকায় ‘সন্ত্রাসী’ হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যার মধ্যে সিংহভাগই পর্যটক। তবে ঘটনার পরপরই প্রশ্ন উঠেছে সেখানে সেনা মোতায়েন ছিল না কেন?
বিরোধী দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, এমনকি বিশ্বপরিমণ্ডলেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও এর আগে মোদী সরকার বারবার বলে এসেছিল যে, কাশ্মীরের ‘সন্ত্রাসী’ পরিবেশ আর নেই। আর এ দাবির কারণেই ঘটনার জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করছেন অনেকেই।
সাধারণ সময়ে পেহেলগামের বৈসরনে সবসময় সেনা মোতায়েন থাকে। তবে ঘটনার কয়েকদিন আগ থেকে সেখানে সেনা সদস্যদের উপস্থিতি ছিল না বলেই স্থানীয়দের দাবি।
এমনকি ঘটনার দিন ভুক্তভোগীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি, এক এক করে ধর্ম জিজ্ঞাসা, গুলি করে হত্যা এবং সন্ত্রাসীদের নিরাপদে সটকে পড়ার এই দীর্ঘ সময়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়নি।
অথচ বৈসরন উপত্যকা থেকে সেনাবাহিনী মাত্র এক কিলোমিটার দূরেই ছিল বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর।
সর্বদলীয় বৈঠকেও এ প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো।
অবশ্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহেরা নিরাপত্তায় নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি বৈসরনে কেন সেনা মোতায়েন ছিল না, তার জবাবও দিয়েছেন তারা। কেন্দ্র সরকারের যুক্তি, প্রশাসনকে না জানিয়েই ওই রুটে পর্যটকদের নিয়ে গিয়েছিলেন ট্যুর গাইডরা।
গত বৃহস্পতিবারের সর্বদলীয় বৈঠকে বৈসরনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গেরা।
সূত্রের বরাত একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাদের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, সাধারণত অমরনাথ যাত্রার আগে বৈসরন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সেখানে সেনা মোতায়েন থাকে। ওই সময়েই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় বৈসরন।
কারণ, তীর্থযাত্রীদের অনেকেরই সেখানে থেকে যান। কিন্তু এবার বৈসরনের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখার আগেই গত ২০ এপ্রিল থেকে সেখানে পর্যটকদের নিয়ে যেতে শুরু করে দিয়েছিলেন গাইডরা। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কিছুই জানত না। সেই কারণেই বৈসরনে সেনা মোতায়েন করা যায়নি।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বৈঠকের শুরুতেই তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের কোনো কোনো নেতা পেহেলগামের নিরাপত্তার এ গাফিলতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন।
তখন অমিত শাহকে সেই অভিযোগ মেনে নেওয়ার ঢংয়ে বলতে শোনা যায়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হয়েছে বলেই তিনি সমস্ত নেতাকে বৈঠকে ডেকেছেন। নয়তো ডাকতেন না।
বৈসরনে হামলার পরপরই (ঘণ্টাখানেকের মধ্যে) ভারতীয় গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পাকিস্তানকে দায়ী করে প্রচার শুরু করে। যদিও এখনো পর্যন্ত হামলার প্রকৃত পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি তারা।
এনডিটিভি দ্য হিন্দুসহ অন্যান্য ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, এ ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। তবে এটাও একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ হতে পারে খবর দিয়েছে এআরওয়াই নিউজ।
স্বল্প পরিচিত কাশ্মীর রেজিন্ট্যান্সও হতাহতের পরপরই ফেসবুক পোস্টে দায় স্বীকার করে। খোদ ভারতীয়রাই পুরো ঘটনাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের পাঁয়তারা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, সরকার নিজেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলাটি ঘটিয়ে পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের আশায়। তা ছাড়া এটি প্রথমবার নয় অতীতেও, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এ ধরনের সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
সে সময় কৌশলে হামলা ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদী আবেগকে উসকে দেওয়া হয় এবং নির্বাচনী সুবিধা আদায় করেছিল বিজেপি শিবির।
তবে সরকারের একতরফা ট্যুর গাইডদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতায় হতবাক ভারতীয়রা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে এর চক্রান্তকারী হিসেবে অভিযুক্ত করছেন।
তাদের দাবি, জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সরকারের কাছে। মূলত বিতর্কিত ওয়াকফ বিলের প্রতিক্রিয়া থেকে দৃষ্টি সরাতেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বিজেপি সরকার। সেনা পারমিশন ছাড়া ট্যুর গাইডরা কোনো পর্যটককে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন না।
আপনার মতামত লিখুন :