ইয়েমেন থেকে হুতি বাহিনীর সম্ভাব্য হামলা থেকে বাঁচতে সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ডে একটি সামরিক রাডার বসিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
চলতি বছরের শুরুতেই ইসরায়েলের তৈরি ইএলএম-২০৮৪ থ্রিডি অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিকলি স্ক্যানড অ্যারে মাল্টি-মিশন রাডার স্থাপন করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিষয়টি নিয়ে অবগত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হুতি বাহিনীর সম্ভাব্য হামলা থেকে নিজেদের বোসাসো বিমানবন্দরকে রক্ষা করতে চলতি বছরের শুরুতে ইএলএম-২০৮৪ রাডারটি বসিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত মার্চের প্রথম দিকের স্যাটেলাইট চিত্র থেকে রাডারটির অবস্থান শনাক্ত করা গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বিমান পরিবহন তথ্য থেকে জানা যায়, সুদানে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) বোসাবো বিমানবন্দরটি ব্যবহার করছে। দুই বছর ধরে সুদানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরএসএফ যুদ্ধ করছে।
চলতি বছরের শুরুতে আরএসএফের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় গণহত্যার অভিযোগে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করেছে সুদান। অবশ্য আবু ধাবি আরএসএফ-কে সামরিক সমর্থন করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
আঞ্চলিক সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, ‘মার্চের শুরুতে আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরপরই সংযুক্ত আরব আমিরাত রাডারটি স্থাপন করে।
রাডারটির উদ্দেশ্য হলো, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি শনাক্ত করা এবং এর বিরুদ্ধে আগাম সতর্কতা দেওয়া, বিশেষ করে বোসাসোকে লক্ষ্য করে হুতির ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা।’
আরেকটি আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের শেষের দিকে বিমানবন্দরে রাডার মোতায়েন করা হয়েছিল। যদিও দাবিটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি।
দ্বিতীয় সূত্র জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাহায্য হিসেবে আরএসএফ প্রতিদিন বোসাসো বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। বড় বড় কার্গো বিমান নিয়মিত ওঠানামা করছে। যার মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ হাতে পাচ্ছে আরএসএফ, কখনো কখনো একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত বড় চালানের সবরাহ পাচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এ ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের প্রতিমন্ত্রী আব্দিফাতাহ আবদিনুর মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু পরবর্তীকালে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে উপহাস করে মিম পাঠান তিনি।
দুটি পৃথক সোমালি সূত্র দাবি করেছে, পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাইদ আবদুল্লাহি দেনি এ ব্যবস্থার জন্য সোমালিয়ার ফেডারেল সরকার বা পুন্টল্যান্ড সংসদের অনুমোদন নেননি। পুন্টল্যান্ড স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সোমালি সূত্র জানিয়েছে, ‘একটি গোপন চুক্তিতে রাডার স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি পুন্টল্যান্ড সরকারের মন্ত্রীসভাসহ উচ্চস্তর এ বিষয়ে অবগত নয়। এ বিষয়ে সোমালি জাতীয় সরকারের নীরবতা বোধগম্য নয়।’
সূত্রটি এমন প্রতিবেদনও তুলে ধরেছে যে, কলম্বিয়ান সৈন্যদের সুদানে পুনঃমোতায়েন করার জন্য বোসাসো বিমানবন্দরে আনা হয়েছিল। যদিও তাদের ভিসা কে দিয়েছে তা স্পষ্ট নয়, কারণ মোগাদিশু এর সঙ্গে জড়িত ছিল না।
সোমালিয়া সরকারের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তারা বহু বছর ধরে আল-শাবাবের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আর্থিক সহায়তা ও সোমালি সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।
২০০৯ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত পুন্টল্যান্ডেও বিশেষভাবে সক্রিয়, যা ভৌগোলিকভাবে আমিরাত ও ইয়েমেনের কাছাকাছি। জলদস্যুতা মোকাবিলা করার জন্য আরব আমিরাত পুন্টল্যান্ডের বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
আর্থিক সহায়তার কারণে ডেনিকেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বলে দেখা হয়।
সোমালি সূত্র জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ডেনির সংযোগ আংশিকভাবে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সমর্থন অর্জনের ইচ্ছা দ্বারা অনুপ্রাণিত। আগামী ২০২৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ভোটে জয়লাভের জন্য তার ব্যাপক সমর্থনের প্রয়োজন হবে।
পুন্টল্যান্ডের সিড্রা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ ও নির্বাহী পরিচালক সেলিম সাইদ সেলিম বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও স্যাটেলাইট চিত্রের প্রতিবেদন সত্ত্বেও ডেনি বা তার প্রশাসন কেউই রাডারের উপস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করেনি। এ নীরবতা ইঙ্গিত দেয় যে, দাবিগুলো সত্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোগাদিশু সম্ভবত আরব আমিরাতের বিরোধিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বরং পুন্টল্যান্ডে আমিরাতের সামরিক কার্যকলাপ সম্পর্কে নীরবতা বেছে নিয়েছে। সোমালি প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমিরাতের সহায়তার ওপর নির্ভর করেন। বিষয়গুলো বন্ধ দরজার আড়ালে সমাধান করা যুক্তিসঙ্গত।’
মোগাদিশুর কাছে আল-শাবাব উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করায় মোহাম্মদের সরকার সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য চাপের মধ্যে রয়েছে। উপরন্তু, সোমালিয়ার শাসন ব্যবস্থার উপজাতি ভৌগলিক কারণে তার নেতৃত্বের বিরোধিতা ক্রমশ বাড়ছে।
মোহাম্মদ একটি গোষ্ঠী-ভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে সর্বজনীন ভোটাধিকারে রূপান্তরের প্রস্তাব করেছেন। তবে, প্রস্তাবটি কিছু শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, যা এটিকে আরও বিতর্কিত বিষয় করে তুলেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সোমালিল্যান্ডের বিচ্ছিন্ন রাজ্যেও সক্রিয়, সেখানেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে, যা মোগাদিশুকে বিরক্ত করছে।
সোমালিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ মো ফিকির সপ্তাহান্তে বলেছেন যে, তার সরকার আমিরাতকে চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দির রহমান সিরোকে প্রেসিডেন্টের প্রোটোকল দেওয়া বন্ধ করা হয়।