ভারত যদি পাকিস্তানের ওপর হামলা চালায়, তবে তা দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, পাকিস্তানে যদি কোনো আক্রমণ বা এ রকম কিছু হয়, তবে অবশ্যই একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হবে।
কাশ্মীর হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে একে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দিল্লি থেকে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে তা আমাদের জন্য আশ্চর্যজনক নয়। আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে পুরো বিষয়টি আমাদের বিরুদ্ধে একটি সংকট তৈরি করার উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে।’
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পর এই হুঁশিয়ারি এসেছে।
এ হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে একটি অখ্যাত সশস্ত্র গোষ্ঠী – দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
আসিফ টিআরএফের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমাদের সরকার স্পষ্টভাবে এই হামলার নিন্দা করে। পাকিস্তান তো নিজেরাই দশকের পর দশক সন্ত্রাসবাদের শিকার।
কিন্তু ভারতে এ ধরনের ঘটনাগুলো একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে ঘটে আসছে। এবারও যে গোষ্ঠীকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, তাদের নাম আমরা কখনো শুনিনি। এমন সংগঠনের নাম আগে কেউ জানত না।’
যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকে আসা অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, বড় শক্তিগুলোর জন্য এটা খুবই সুবিধাজনক যে তারা এই অঞ্চলে যা-ই ঘটুক না কেন, তার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে।
‘লস্কর-ই-তৈয়বা’র সঙ্গে হামলার যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আসিফ বলেন, এই গোষ্ঠী এখন বিলুপ্ত। লস্কর-ই-তৈয়বা অতীতের নাম। এটি এখন আর অস্তিত্বে নেই।
তিনি বলেন, যখন মূল সংগঠনই নেই, তখন তার শাখা সংগঠন কীভাবে তৈরি হয়?
তিনি অতীতের ঘটনার দিকেও ইঙ্গিত করেন, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা এবং বালাকোটের ঘটনাগুলোকে ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এর আগেও এমন ঘটেছে, যেমন পুলওয়ামা। সেটাও একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ ছিল। আমরা এই হামলার জন্য অভিযুক্ত সংগঠনটির নাম আগে কখনো শুনিনি।
এসব ঘটনা উল্লেখ করে আসিফ বলেন, যদি ভারত আমাদের আক্রমণ করে, তাহলে আমরাও সমানভাবে জবাব দেব।
পাকিস্তানের প্রস্তুতি নিয়ে আসিফ বলেন, ভারতের যেকোনো হামলার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত আছি।
তবে পাশাপাশি তিনি সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই বিরোধটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত, সংঘাতের মাধ্যমে নয়।
প্রসঙ্গত, ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
একইসাথে, এই উত্তেজনা যাতে আর বাড়তে না পারে সেজন্য প্রতিবেশী দুই দেশকে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :