কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এই ঘটনার পর পাকিস্তান জোরালোভাবে নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। হামলায় ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালি পর্যটকের মৃত্যু হয়, যেটিকে ভারত পাকিস্তান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের কাজ বলে দাবি করে। তবে পাকিস্তান তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তে রাজি। যারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবে, তাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’একই সুরে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেন, ‘পাকিস্তান শান্তি ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী। আমরা চাই সত্য প্রকাশিত হোক।’
এদিকে হামলার পর থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কঠোর প্রতিশোধের ঘোষণা দেন। দেশের অভ্যন্তরে সামরিক প্রতিক্রিয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। এরই মাঝে পাকিস্তান তার আকাশপথ ভারতীয় বিমানের জন্য বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে ভারত ঐতিহাসিক সিন্ধু নদ চুক্তি স্থগিত করে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এতটাই বেড়ে যায় যে, টানা চার বছরের শান্তির পর ফের নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কোনো প্রাণহানি হয়নি বলে জানানো হয়।
কাশ্মীরের মাটিতে হামলার পর ভারতীয় বাহিনী অভিযুক্ত সন্দেহভাজনদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যেসব বাড়ির বাসিন্দাদের হামলার সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের বাড়ি লক্ষ্য করে এই ধ্বংস অভিযান চালানো হচ্ছে।
ঘটনার জেরে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবাতেও প্রভাব পড়ে। পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ থাকায় ভারতীয় এয়ারলাইনগুলোর বিমান ভাড়া বেড়ে গেছে, পাশাপাশি রুট দীর্ঘ হওয়ায় যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করতে হচ্ছে। বিষয়টি সামাল দিতে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় যাত্রী সহায়তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়।
এই হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’নামে এক নতুন গোষ্ঠী। তবে ভারত সরাসরি পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান এই গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়েছে। এর পাল্টা জবাবে পাকিস্তান বলে, তারা এই হামলার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়।
দুই দেশের মধ্যে চলমান পানি চুক্তি স্থগিত, ভিসা বাতিল এবং সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে। একই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে, ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়ে ঝিলম নদীতে বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ স্পষ্ট ভাষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, ‘কাশ্মীরের পর্যটন এলাকায় ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করা হোক। আমরা তাতে সহযোগিতা করব।’
এই ঘটনার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকে। আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং দ্রুত সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়।
তবে আপাতত দুই দেশের বক্তব্যেই অনড়তা স্পষ্ট। ফলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই উত্তেজনা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? উত্তপ্ত পরিস্থিতি কি সীমিত থাকবে, নাকি বড় কোনো সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাবে উপমহাদেশ?