ঢাকা বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫

হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা ট্রুডোর, দায়িত্বে কে?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম

হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা ট্রুডোর, দায়িত্বে কে?

ছবি, সংগৃহীত

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কয়েক মাস ধরেই ঘুরেফিরে একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন, আপনি কি পদত্যাগ করবেন! তবে ট্রুডো লিবারেল পার্টির নেতার পদ ছাড়তে চাননি।

এদিকে, ভোটারদের মধ্যে তাকে নিয়ে হতাশা ক্রমাগত বাড়ছিল এবং জনমত জরিপগুলোতে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বৈরিতাও ক্রমাগত বাড়তে দেখা যাচ্ছিল।

এমনকি নিজেকে ‘যোদ্ধা’ ঘোষণা করেও ট্রুডো নিজ দলেই বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। দলের অনেকেই তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন।

এই বিরোধিতার মুখেই সোমবার রাষ্ট্রীয় বাসভবন রিডাউ কটেজের সামনে দেওয়া বক্তব্যে ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে দেশের জন্য সত্যিকারের পছন্দের কাউকে প্রয়োজন। আমার কাছে এটি স্পষ্ট যে, আমাকে দলের ভেতরেই লড়তে হলে, আমি এই নির্বাচনে সবচেয়ে ভাল প্রার্থী হতে পারি না।”

তবে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি নতুন নেতা বেছে না নেওয়া পর্যন্ত তার প্রধানমন্ত্রী পদ বহাল থাকবে। নতুন নেতা নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে দলীয়ভাবে। দলকে নতুন নেতা খোঁজার সময় দিতে ট্রুডো আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত রাখতে বলেছেন।

প্রায় এক দশক আগে প্রগতিশীল রাজনীতির নতুন মুখ হিসেবে ক্ষমতায় উঠে এসেছিলেন ট্রুডো। দলকে পড়ন্ত অবস্থা থেকে টেনে তুলে ২০১৫ সালে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় বসেন তিনি। তার তারুণ্যের কারিশমা এবং আশাবাদী রাজনৈতিক বার্তায় ভোটাররা হয়েছিল মোহমুগ্ধ।

তারা বিপুল ভোট দিয়ে লিবারেলদেরকে তৃতীয় স্থান থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে পার্লামেন্টে পৌঁছে দেয়, কানাডার রাজনৈতিক ইতিহাসে সেটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। এরপর থেকে টানা গত নয় বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে এসেছেন লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো।

তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় বারাক ওবামা, আঙ্গেলা ম্যার্কেল, শিনজো আবে এবং ডেভিড ক্যামেরনের মতো বিশ্বনেতারা শাসনক্ষমতায় ছিলেন। পরে এই সব নেতা একে একে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও ট্রুডো তার পদে বহাল থাকেন। ৫৩ বছর বয়সী ট্রুডো বর্তমানে জি-৭ জোট ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নেতা।

বিশ্ব মঞ্চে অভিষেক হওয়ার পর এবং দুটি সাধারণ নির্বাচনে ট্রুডো তার দলের জন্য সৌভাগ্য হয়েই ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা ট্রুডো হঠাৎ কেন পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন?

কানাডার রাজনীতি বিষয়ক সাংবাদিক এবং ‘জাস্টিন ট্রুডো অন দ্য রোপস’-এর লেখক পল ওয়েলস সম্প্রতি বিবিসি-কে বলেছেন, তার বিশ্বাস- একজন গৌরবময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রুডো স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিশেষ করে আদিবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও জলবায়ু নীতির মরেতা বিভিন্ন বিষয়ে তার প্রকৃত নেতৃত্বের জন্য তাকে স্মরণ করা হবে।

তবে তিনি (ট্রুডো) আবার এমন মানুষও, যিনি ক্রমেই জনমত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন এবং সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলেন না।

সোমবার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেওয়া ভাষণে ট্রুডো কোভিড মহামারী সামলানো, ডনাল্ড ট্রাম্পের আগের মেয়াদের প্রশাসনের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এবং শিশুদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য সব কর্মসূচি তার সরকার সম্পাদন করেছে বলে তুলে ধরেন।

কিন্তু ট্রুডো সরকারের জনপ্রিয়তা কমার পেছনে ছিল বেশ কয়েকটি নৈতিক কেলেঙ্কারি। এসএনসি-লাভালিন কর্পোরেশনের দুর্নীতির তদন্ত এবং বাহামায় বিলাসবহুল ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রুডো কেন্দ্রীয় স্বার্থের সংঘাত সংশ্লিষ্ট বিধি লঙ্ঘন করেন।

আরবি/এস

Link copied!