ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

শেখ হাসিনার অবস্থান ঘিরে উত্তপ্ত ভারতীয় রাজনীতি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৪, ১১:০৬ এএম

শেখ হাসিনার অবস্থান ঘিরে উত্তপ্ত ভারতীয় রাজনীতি

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। এবার দেশটিতে তার অবস্থান নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে ভারতীয় রাজনীতি।

রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করেছেন, কিসের ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয়ে দিয়েছে মোদি সরকার? বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোর মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে থাকে বলে উল্লেখ করেন সোরেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের “অনুপ্রবেশকারী” ইস্যুতে মন্তব্যের জবাবে সোরেন এসব কথা বলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির ইশতেহার প্রকাশ এবং “অনুপ্রবেশ” সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিতর্কিত মন্তব্যের জবাবে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সোরেন উল্লেখ করেছেন, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঘটে। একইসঙ্গে তিনি এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছে।

এছাড়াও রোববার (৩ নভেম্বর) গাড়োয়া বিধানসভা আসনের রাঙ্কায় একটি নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, “আমি জানতে চাই, বাংলাদেশের সাথে বিজেপির কোনও ধরনের অভ্যন্তরীণ কোনও বোঝাপড়া আছে কিনা।” তিনি বলেন, “দয়া করে আমাদের বলুন— কিসের ভিত্তিতে আপনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ভারতে প্রবেশ করার এবং আশ্রয় চাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর মাধ্যমেই ভারতে প্রবেশ করে। তারা নিজেরাই এটা বলছে।”

এর আগে একইদিন বিজেপির ইশতেহার প্রকাশের সময় অমিত শাহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশকারীদের “আশ্রয়” দেওয়ার অভিযোগ করে বলেন, “আপনি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিয়েছেন। আপনি অনুপ্রবেশকারীদের আপনার ভোটব্যাংক বানিয়েছেন। আজ আমি ঝাড়খণ্ডের জনগণকে জানাতে চাই, তুষ্টির রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে বিজেপি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেবে এবং ঝাড়খণ্ডকে প্রথম থেকে পুনর্গঠন করবে।”

এদিকে, ঝাড়খণ্ডে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে বলে গত সেপ্টেম্বরে হুমকি দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একইসঙ্গে তিনি রাজ্যের সাঁওতাল পরগনায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জমি দখল করার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের “নীরবতা” নিয়েও সেসময় প্রশ্ন তোলেন।

তবে নির্বাচনের আগে বিজেপি হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে বিভাজনের বীজ বপন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও উত্তেজনা তৈরি করছে বলে সেসময় অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। বিশেষ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

এছাড়া ঝাড়খণ্ডে বসবাসরত মুসলিমদের ১১ শতাংশই “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” বলে কয়েকদিন আগে দাবি করেন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপির এমপি নিশিকান্ত দুবে। সেসময় তিনি বলেন, “১৯৫১ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ ছিল মুসলিম। এখন এই হার বেড়ে পৌঁছেছে ২৪ শতাংশে। ভারতজুড়ে এই সময়সীমার মধ্যে মুসলিমদের হার বেড়েছে ৪ শতাংশ কিন্তু আমার সাঁওতাল পরগনায় এ হার বেড়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ। এই ১৫ শতাংশের মধ্যে ১১ শতাংশই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং ঝাড়খণ্ডের রাজ্য সরকার তাদের গ্রহণ করেছে।”

 

আরবি/জেআই

Link copied!