বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের প্রবেশ সীমিত করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে কানাডা। দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক মিলার বলেছেন, আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৩৭ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
আগামী দিনগুলোতে অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো- যারা কানাডায় আসতে চান, তারা এখন থেকে আর চাইলেই এ দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। আর যারা ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছেন, তারা চাইলেই স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগও পাবেন না।’
প্রসঙ্গত, ভৌগলিক আয়তনের বিচারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা বরাবরই ‘অভিবাসীদের স্বর্গ’ বলে পরিচিত। উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থানের অবারিত সুযোগ এবং আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার স্বল্পতাই এর প্রধান কারণ। বিগত বছরগুলোতে দেশটির সরকার সব সময় অভিবাসীদের স্বাগত জানিয়েছে।
তবে করোনা মহামারির ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর বদলে যায় পরিস্থিতি। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে জোয়ারের মতো আসতে থাকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খেতে থাকে কানাডার সরকার। দেশটির আবাসন ও নাগরিক পরিষেবা ব্যবস্থায় সৃষ্ট হয় অসহনীয় চাপ।
এই অবস্থা সামাল দিতে ২০২৩ সাল থেকে বিদেশি শিক্ষার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশ সীমিত করার পদক্ষেপ নেয় দেশটির সরকার। দেশটির পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৯০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী বা কর্মীকে প্রবেশ করতে দিয়েছিল কানাডা। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে প্রবেশ করতে পেরেছেন মাত্র এক লাখ ৭৫ হাজার ৯২০ জন অভিবাসী।
এছাড়া ২০২৩ সালে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অন্তত ৫ শতাংশকে প্রতি বছর তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সেই প্রতিশ্রুতিও রেখেছে সরকার। গত বছরের শুরু থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন মন্ত্রণালয়। বিদেশি অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগবিষয়ক যে সব সরকারি প্রকল্প-কর্মসূচি ছিল, সেসবও স্থগিত করা হয়েছে।
গত এক বছরে কানাডার প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে ২ শতাংশ। দেশটির ডানপন্থী এবং অভিবাসনবিরোধী বিভিন্ন দল এজন্য অভিবাসীদের ঘনত্বকে দায়ী করছেন। জনগণের মধ্যেও ক্রমশ অভিবাসীবিরোধী মনোভাব শক্ত হচ্ছে। তার ফলাফলও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি একটি স্থানীয় নির্বাচনে হেরে গেছে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল লিবারেল পার্টি। সার্বিক দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডার সরকার।
অন্যদিকে, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় কানাডার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের প্রবেশ সীমিত করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে কানাডা সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :