ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

প্রথম দিনেই যেসব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ দিলেন ট্রাম্প

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম

প্রথম দিনেই যেসব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ দিলেন ট্রাম্প

ছবি : সংগৃহীত

দ্বিতীয়বার নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর ওভাল অফিসে বসে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করছেন তিনি।

এর আগে স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল রোটুন্ডায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন ট্রাম্প।

এরপর ওভাল অফিসে ফিরে শুরুতেই বাতিল করেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ। অভিবাসন এবং জ্বালানি নীতি থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তা এবং ফেডারেল (সরকারি) কর্মকর্তা-কর্মীচারীদের বিষয়েও আদেশ দিয়েছেন। আবার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরাইলিদের ওপর দিয়েছেন নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণাসহ একাধিক আদেশে সই করেন নতুন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম নির্বাহী আদেশ এবং পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রের  প্রেসিডেন্ট ৮টি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে প্রথম দিনের কাজ শুরু করেন। যার মধ্যে রয়েছে: ৭৮টি বাইডেন যুগের নির্বাহী পদক্ষেপ স্থগিত করা; ট্রাম্প প্রশাসন সরকারের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না পাওয়া পর্যন্ত আমলাদের প্রবিধান জারির উপর নিয়ন্ত্রণমূলক স্থগিতাদেশ; সামরিক বাহিনী এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ছাড়া সকল সরকারি নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ।

বাকি ৮টি আদেশ হলো- ফেডারেল কর্মীদের পূর্ণ সময়ের ব্যক্তিগত কাজে ফিরে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা; জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবেলায় প্রতিটি বিভাগ এবং সংস্থাকে নির্দেশ; প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার; বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং বাকস্বাধীনতার সেন্সরশিপ রোধ এবং ‘সরকারের অস্ত্রায়ন’ বন্ধ করার একটি সরকারি আদেশ।

তাছাড়া, ওভাল অফিসে বসে ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত প্রথম নির্বাহী আদেশটি হলো- ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গায় দোষী ১ হাজার ৫০০ জনকে ক্ষমা করে দেওয়া।

এসব নির্বাহী আদেশের একটি বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হলো-

টিকটক:

ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটকের জন্য ৭৫ দিনের স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করেছেন। মূলত জাতীয় নিরাপত্তা চুক্তির জন্য আলোচনা চলমান থাকায় এই নিষেধাজ্ঞা বিলম্বিত করা হয়েছ।

শুল্ক:

ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল সংস্থাগুলিকে চীন, মেক্সিকো এবং কানাডার সাথে শুল্ক এবং বাণিজ্য সম্পর্ক পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেক্সিকো এবং কানাডার উপর ২৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

৬ জানুয়ারি ক্ষমা: ডোনাল্ড ট্রাম্প ওভাল অফিসে স্বাক্ষরিত ৬ জানুয়ারী, ২০২১ সালের মার্কিন ক্যাপিটল দাঙ্গায় ভূমিকার জন্য প্রায় ১,৫০০ জনের পূর্ণ ক্ষমা। এটি ১৪ জনের সাজাও কমিয়েছে।

ক্যাপিটাল হিলের দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা

ওভাল অফিসে বসার পরপর ট্রাম্প ক্যাপিটল দাঙ্গার প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনকে ক্ষমার আদেশে সই করেছেন। এসব ব্যক্তি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।

ক্যাপিটলে দাঙ্গায় জড়িত হাজার দেড়েক সমর্থককে মুক্তি দেওয়ার ইঙ্গিত কয়েক মাস আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ক্যাপিটল ওয়ান অ্যারেনায় ভাষণ দেন, তখনই তিনি ঘোষণা করেন- ওভাল হাউসে পৌঁছেই তিনি ৬ জানুয়ারির ঘটনার জন্য অভিযুক্তদের ক্ষমা করবেন।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের পদক্ষেপ ট্রাম্পের:

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের যে বিধান দেশটির সংবিধানে আছে সেটি বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংবিধান স্বীকৃত এই আইনে বদল আনতে চাইছেন তিনি।

ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে অবৈধ অভিবাসী কিংবা সাময়িক ভিসাধারী বাবা মায়ের সন্তানকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব না দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

আশ্রয় এবং শরণার্থী:

ট্রাম্প ছয় মাসের জন্য শরণার্থীদের পুনর্বাসন স্থগিত করেছেন এবং `catch and release‍‍` নীতিমালা বাতিল করার আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে `Remain in Mexico’ নীতি পুনর্বহাল করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, জো বাইডেনের প্রশাসন ‘Remain in Mexico’ নীতির অবসান ঘটায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রয়োগকারী সংস্থায়, `catch and release‍‍` বলতে অভিবাসন আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকাকালীন অভিবাসীদের সম্প্রদায়ের কাছে ছেড়ে দেওয়ার একটি প্রথাকে বোঝায়। মূলত অভিবাসীদের আটক রাখার বিকল্প হিসেবে এই নীতিমালা ব্যবহার করা হয়।

 অবৈধ অভিবাসীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড:

আমেরিকানদের ক্ষতি করে এমন অবৈধ অভিবাসীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড চাইতে বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ট ট্রাম্প।

প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহার:

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু সম্পর্কিত নীতিগুলি উল্টে এবং তেল, গ্যাস এবং খনির কার্যক্রম সহজতর করে মার্কিন জ্বালানি উৎপাদন সম্প্রসারণের জন্য জরুরি ক্ষমতাও প্রয়োগ করেছেন।

২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে সরকারগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই এর সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প।

WHO থেকে প্রত্যাহার:

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।

মাত্র দুটি লিঙ্গ:

ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি লিঙ্গ থাকার নীতি গ্রহণ করেছেন। স্বীকৃত দুটি লিঙ্গ হচ্ছে পুরুষ এবং মহিলা। সমস্ত সরকারি বিধি এবং নথিতে লিঙ্গের সংজ্ঞাগুলিকে আরও স্পষ্ট করা তাগিদ দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডের আদেশ:

ডোনাল্ড ট্রাম্প মৃত্যুদণ্ডের বহালের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এবং এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রয়োজনীয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে রাজ্যগুলিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য পর্যাপ্ত প্রাণঘাতী ইনজেকশন থাকে।

টিকা আপত্তিকারীদের পুনর্বহাল:

সামরিক বাহিনীর যেসব সদস্য কোভিড-১৯ টিকা প্রত্যাখ্যান করার জন্য বরখাস্ত হয়েছিলেন তাদের পূর্ণ বেতনসহ পুনর্বহাল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

‘ওয়ার্ক ফ্রাম হোম’ সুবিধা বাতিল:

সরকারি কর্মীদের বাসায় থেকে দাপ্তরিক কাজ করার সুবিধা বাতিল করে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এই আদেশের ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সপ্তাহে পাঁচদিন পূর্ণ সময় দপ্তরে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

এই নির্বাহী আদেশের বিষয়ে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, সরকারের নির্বাহী শাখার সব বিভাগ ও সংস্থার প্রধানরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘরে বসে কাজের ব্যবস্থা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন এবং সব কর্মীর নিজ নিজ কর্মস্থলে পূর্ণ সময়ের জন্য সশরীর কাজে ফেরার ব্যবস্থা করবেন।

নিয়োগ স্থগিতকরণ:

ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন এবং জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি ছাড়া ফেডারেল কর্মচারীদের জন্য নিয়োগ স্থগিত করেছেন।

বহিরাগত রাজস্ব পরিষেবা:

ট্রাম্প শুল্ক সংগ্রহের জন্য একটি ‘External Revenue Service’ তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন, যা মার্কিন কোষাগারের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজস্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

গত মাসে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে ঘোষণা করেন- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা (ব্রিকস দেশগুলি) যদি নতুন ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করে অথবা বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে অন্য কোনও মুদ্রা সমর্থন করে, তাহলে তাদের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

মুদ্রাস্ফীতি জরুরি অবস্থা:

ট্রাম্প সংস্থাগুলিকে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানির দামের মতো বিষয়ে জলবায়ু নীতিগুলি বাদ দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন।

অফশোর ড্রিলিং:

ডোনাল্ড ট্রাম্প অফশোর ড্রিলিং অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশে কূপ খনন করে প্রেট্রোলিয়াম উত্তলনের বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এবং মার্কিন কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভকে ধারণক্ষমতা অনুসারে পুনরায় পূরণ করার পরিকল্পনা করেছেন।

আরবি/ এইচএম

Link copied!