ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন সম্প্রসারণ পরিকল্পনা স্থগিত করল ভারত

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম

ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন সম্প্রসারণ পরিকল্পনা স্থগিত করল ভারত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য তৈরি করা বাংলাদেশ–ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপি) সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে ভারত।বর্তমান রাজনৈতিক সংকট বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে যে সংকট শুরু হয়েছে সেই কারণে দেশটি এ পাইপলাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।

এই পাইপলাইন দিয়ে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ডিজেল বহন ও পাইপলান সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা ভারতের ছিলে তা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এমন তিনজন ব্যক্তি বলেছেন, ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন বাংলাদেশের পার্বতীপুরের বাইরেও প্রসারিত করার প্রস্তাব ছিল। তবে ভারত সরকার এখন এই পাইপলাইন সম্প্রসারণের বিষয়টিতে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে ভারতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেডের শিলিগুড়িস্থ মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে পাইপালাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে থাকে।

তিনজনের মধ্যে একজন বলেছেন, ‘উদ্বোধনের পর থেকে যেহেতু প্রকল্পটি ভালোভাবে কাজ করছে এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছে, তাই প্রতিবেশী বাংলাদেশের আরও বেশকিছু জায়গায় পাইপলাইনটি প্রসারিত করার বিষয়টি বিবেচনাধীন ছিল। তবে এখন (বাংলাদেশের) রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা অস্থিতিশীল হওয়ায় ভারত এ বিষয়ে আরও বিবেচনা ও আলোচনার জন্য অপেক্ষা করতে চায়। তবে এখনই নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে না।’

লাইভমিন্ট বলছে, গত বছরের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের একটি তেল ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইনটি উদ্বোধন করেছিলেন।

এ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) বাংলাদেশে পরিবহন করার ক্ষমতা রয়েছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় সাতটি জেলায় পণ্যটি সরবরাহ হয়ে থাকে।

এই পাইপলাইনটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নির্মিত প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি পাইপলাইন। ২০২০ সালে এই পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছিল এবং এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল ৫২০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ভারত সরকার দিয়েছে ৩৩৭ কোটি টাকা।

তিনজনের মধ্যে আরেকজন বলেন, ডিজেলের পাশাপাশি বাংলাদেশে হাই সালফার ফুয়েল অয়েল (এইচএসএফও) এবং ফার্নেস অয়েল পাঠানোর প্রস্তাবও বিবেচনায় ছিল ভারতের। এইচএসএফও মূলত সামুদ্রিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়ত। আর ঘর, ব্যবসা এবং শিল্প ইউনিট গরম করার জন্য ব্যবহৃত হয় ফার্নেস অয়েল।

প্রসঙ্গত, ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নুমালিগড় রিফাইনারী লিমিটেডের শিলিগুড়ির মার্কেটিং রেল টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) রেলহেড অয়েল ডিপো পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ভারতীয় অংশে ৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পড়েছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শিলিগুড়ি মার্কেটিং রেল টার্মিনালে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

অবশ্য যে চুক্তির আওতায় এই পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছিল এবং ডিজেল আমদানি করা হচ্ছিল তাতে কি আছে তা বিস্তারিত প্রকাশ না করায় এ পাইপলাইন বাংলাদেশকে জ্বালানির ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ভারত-নির্ভর করে তুলছে কি-না তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!