দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরশত্রু দেশ ভারত ও পাকিস্তান। জন্মলগ্ন থেকেই এই শত্রুতার সূত্রপাত। কাশ্মির ইস্যু থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদ, এমন কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে মতবিরোধ নেই। এই পর্যন্ত পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি চারটি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়েছে।
ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ গোপন কিলিং মিশন পরিচালনা করছে বলে এক প্রতিবেদনে সবিস্তারে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
২০২১ সালের পর পাকিস্তানে সংগঠিত এই ধরনের ছয়টি গুপ্তহত্যার ঘটনা তদন্ত করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এই প্রতিবেদন করতে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তা, সশস্ত্র দলের যোদ্ধাদের মিত্র ও পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার এবং পাকিস্তানি তদন্তকারীদের সংগ্রহ করা পুলিশি নথি ও অন্যান্য প্রমাণ পর্যালোচনা করা হয়।
এই প্রতিবেদনে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতীয় গুপ্তহত্যার প্রোগ্রামের রূপরেখা প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানে সংগঠিত ভারতের গুপ্তহত্যার মিশনের সঙ্গে উত্তর আমেরিকায় সংগঠিত দেশটির গুপ্তহত্যার মিশনের মিল রয়েছে।
ভারতীয় গুপ্তহত্যার মিশনের অংশ হিসেবে আমির সরফরাজ টাম্বার ওপর হামলার ঘটনাটি সামনে আনা হয়। আমির সরফরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০১৩ সালে কোট লাখপাত কারাগারে ভারতীয় বন্দী সরবজিৎ সিংকে হত্যা করেছেন। এই ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর দীর্ঘস্থায়ী ছায়াযুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ বলে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীদের ব্যবহার করে আসছিল। তবে ২০২১ সাল থেকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) একটি পদ্ধতিগত গুপ্তহত্যার প্রোগ্রাম চালু করেছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের মাটিতে অন্তত ছয়জন মানুষকে হত্যা করেছে র।
নরেন্দ্র মোদি ভারতের স্বাধীনতার পর নিজেকে দেশটির সবচেয়ে দৃঢ় ও শত্রুদেশের কাছে মারমুখো নেতারূপে তুলে ধরছেন। গত বছর থেকে পশ্চিমা দেশের সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়। অভিযোগ উঠে যে র কর্মকর্তারা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। পাকিস্তানের মাটিতে পরীক্ষা-নীরিক্ষাকৃত ভারতের অভিযানের সম্প্রসারণ বলে একে মনে করা হয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, পাকিস্তানে সংগঠিত গুপ্তহত্যায় সাধারণত স্থানীয় ছোট অপরাধী বা আফগান ভাড়াটেদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই অভিযানে কখনও ভারতীয় নাগরিকদের ব্যবহার করা হয়নি।
এই কাজে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করতে র কর্মকর্তারা দুবাইয়ের ব্যবসায়ীদের দালাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া টার্গেটকে নিরীক্ষণ, হত্যাকাণ্ড পরিচালনা ও অর্থ স্থানান্তরের জন্য পৃথক ও সিলোড টিম নিযুক্ত করেছেন। এই সার্কেল বিভিন্ন মহাদেশে স্থাপিত অনিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কার্যকর হয়।
তবে র মাঝে মাঝে দুর্বল কৌশল ও কম প্রশিক্ষিত ঠিকাদার ব্যবহার করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডিয়ান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ডগুলো মূলত জাতিসংঘ কর্তৃক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত দুটি গোষ্ঠীর সন্দেহভাজন নেতাদের লক্ষ্য করে করা হয়। সংগঠন দুটি হলো লস্কর-ই-তাইবা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানে পরিচালিত ভারতের অনেক কার্যক্রম আগে কখনও প্রকাশিত হয়নি। গোপনীয়তা বজায় রাখতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তারা কথা বলেছেন এবং এই বিষয়ে নানান তথ্য প্রদান করেছেন।
পাকিস্তানি এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তদন্তের ওপর নির্ভরশীল না। ভারত কি শান্তিপূর্ণভাবে উঠে আসতে পারবে? আমাদের উত্তর হলো ‘না’।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আপনার মতামত লিখুন :