ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

ট্রাম্পের ‘শপথ’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন যারা

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৯:৫৮ পিএম

ট্রাম্পের ‘শপথ’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন যারা

ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে।

পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে সৌজন্যমূলকভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ থাকে। সাধারণত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। ট্রাম্প অবশ্য প্রচলিত রীতিনীতির ধার ধারেন না। তিনি তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তালিকায় ইউরোপের মধ্যমপন্থীদের বাদ দিয়ে অনেক কট্টর ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানাতে দেখা গেছে।

যারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন-

ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ওপরের সারিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেইর নাম রয়েছে। এর মধ্যে মিলেই এক মাস আগেই নিশ্চিত করেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে মেলোনি ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের মার–এ–লাগো রিসোর্টে যান। ট্রাম্প তাঁকে তখন এক ‘দুর্দান্ত নারী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানেও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মেলোনির কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসাকারী হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবানও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে অরবানের কার্যালয় থেকে হাঙ্গেরির সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, তিনি ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে গত মাসেই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের হবু প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গত মাসে ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, এই অনুরোধ ‘সির সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় ট্রাম্পের আগ্রহকে’ ইঙ্গিত করছে। তবে বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে কোনো চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিত হওয়ার নজির নেই। সি চিন পিং চাইলেও তাঁর উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

কারণ, চীনের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশটি বেশ কঠোর নিয়মনীতি অনুসরণ করে। কিন্তু সি উপস্থিত না থাকলেও এই অনুষ্ঠানে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে ট্রাম্পের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেবেন সি। সির সম্ভাব্য প্রতিনিধিদের মধ্যে আছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ সম্বোধনকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি। আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বিষয়টি এড়িয়ে যান।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াও নিশ্চিত করেছেন, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর।

ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা দলের (ট্রানজিশন টিম) পক্ষ থেকে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বুকেলে থাকবেন কি না, এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ওয়াশিংটনে সংক্ষিপ্ত সফরকালে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নোবোয়া।

অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ব্রাজিলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলার কারণে পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারছেন না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ও শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের পাশাপাশি শপথ অনুষ্ঠানে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তি খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকছেন।

ফরাসি ধনকুবের এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জেভিয়ে নিয়েল অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন।

আমন্ত্রণ পেয়েছেন অনেক কট্টরপন্থীও

ট্রাম্পের সহযোগীরা যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কারেন পিয়ার্সের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র মাস্কের সঙ্গে ফারাজের প্রকাশ্য বিবাদ সত্ত্বেও ফারাজ তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।

ফ্রান্স থেকে, অভিবাসনবিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ‘দ্য ফরাসি সুইসাইড’ বইয়ের লেখক জেমোর তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। তাঁর সঙ্গী ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা সারাহ নাফোও অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তিনি উপস্থিত থাকবেন।

জার্মানির কট্টর ডানপন্থীদেরও আমন্ত্রণের তালিকায় রেখেছেন ট্রাম্পের সহযোগীরা। অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দল থেকে জার্মান চ্যান্সেলর প্রার্থী অ্যালিস ভাইদেলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে তাঁর কার্যালয় থেকে পলিটিকোকে বলা হয়েছে, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জার্মান নির্বাচনে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় তিনি অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারবেন না। তাঁর বদলে দলের আরেক নেতা তিনো ক্রপালা যাবেন বলে জানিয়েছে এএফডি।

জার্মানির রক্ষণশীলরা ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির মুখপাত্র ইয়ুর্গেন হার্ডটকে পাঠাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বার্লিনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেয়াস মাইকেলিসও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

স্পেনের কট্টর জাতীয়তাবাদী ভক্স পার্টির নেতা সান্তিয়াগো আবাস্কালকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পর্তুগালের ডানপন্থী চেগা পার্টির প্রধান আন্দ্রে ভেন্তুরাসহ ইউরোপের আরও বেশ কয়েকজন কট্টর ডানপন্থী নেতা ট্রাম্পের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

যাঁরা আমন্ত্রণ পাননি

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে কারা কারা আমন্ত্রণ পাননি, সে তথ্যও প্রকাশ হতে শুরু করেছে। ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লেন আমন্ত্রণ পাননি। তাঁর মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত জোভিতা নেলিউপসিয়েন ক্যাপিটলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনবারের প্রার্থী ও কট্টর ডানপন্থী নেত্রী মেরিন লা পেনকে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পেনের শিষ্য জর্দান বারদেলাও আমন্ত্রণ পাননি। তাঁদের দলের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরবি/এইচএম

Link copied!