ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

১১১ নারীকে ধর্ষণ–যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ধনকুবের

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৮:০০ পিএম

১১১ নারীকে ধর্ষণ–যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ধনকুবের

ছবি, সংগৃহীত

লন্ডনের অভিজাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যারডসের সাবেক মালিক আল ফায়েদ শুরুতে ঠাণ্ডাপানীয় বিক্রেতা ছিলেন। পরে, সেলাইমেশিনের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তিনি আবাসন ও জাহাজ নির্মাণ কাজের ব্যবসা করেন। এভাবে নিজের ভাগ্য গড়ে তোলেন মিসরীয় ধনকুবের ফায়েদ।

চার দশকে ১১১ জনের বেশি নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে এই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে।  তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সি ভুক্তভোগীর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর।

ফায়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার ওই নারী জানান, ঘটনার সময় তিনি ছিলেন একজন কিশোরী। ফায়েদ একজন রাক্ষসের মতো ছিলেন। তার মধ্যে কোনো নৈতিকতা ছিল না। হ্যারডসের সব কর্মী তার কাছে ছিলেন ‘খেলনার’ মতো।

যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস ও সেন্ট ত্রোপেজ এলাকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ফায়েদের যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন নারীর হয়ে কাজ করেন আইনজীবী ব্রুস ড্রামমন্ড।

তিনি বলেন, হ্যারডসের ভেতরে দুর্নীতি ও নিপীড়নের যে জাল বোনা হয়েছিল, তা ছিল অবিশ্বাস্য ও খুবই অন্ধকারের। 
ভুক্তভোগী এক নারী হ্যারডসের অন্ধকার জগতের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, লন্ডনের পার্ক লেনের একটি বাসায় তাকে ধর্ষণ করেছিলেন ফায়েদ। এতে তার কোনো সম্মতি ছিল না। সেটা ফায়েদকেও জানিয়েছিলেন। তবে কোনো কাজ হয়নি।

তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের যত অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কুখ্যাত যৌন নির্যাতনকারীদের একজন হতে চলেছেন তিনি।  এসব ঘটনায় লন্ডনের অভিজাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যারডসের সাবেক মালিক ফায়েদের দুষ্কর্মের সহযোগী হিসেবে পাঁচ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। তাদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।

গত মাসে দ্য গার্ডিয়ান এক খবরে জানিয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত কতিপয় পুলিশ সদস্য ফায়েদকে তার নারী কর্মীদের ধর্ষণ ও নিপীড়নে সহায়তা করেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে কম বয়সী এক তরুণীও ছিলেন, যিনি হ্যারডসের ওই মালিকের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

২০০৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অভিযোগকারী ১১১ নারীর মধ্যে ২১ জন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা পুলিশকে জানান। গত সেপ্টেম্বর মাসে ফায়েদের ওপর বিবিসি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করার পর ৯০ জন নারী অভিযোগ জানাতে এগিয়ে আসেন।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ১৯৭৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নে আল ফায়েদের যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি পৃষ্ঠার প্রমাণ পর্যালোচনা করেছে তারা। প্রমাণের মধ্যে ভুক্তভোগীদের বিবৃতিও রয়েছে।

তদন্তের অংশ হিসেবে ‘ডাইরেক্টরেট অব প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ডস’–এর গোয়েন্দারা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কোনো সদস্য ফায়েদের দুষ্কর্মে সহযোগিতা করেছেন কিনা, তা-ও বের করার চেষ্টা করছেন।

সাক্ষী হিসেবে দেওয়া এক বিবৃতিতে হ্যারডসের একজন সাবেক নিরাপত্তা পরিচালক বব লফটাস (৮৩) দাবি করেছিলেন, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক একজন কমান্ডার হ্যারডসকে সহায়তা করার বিনিময়ে বিলাসবহুল উপহার গ্রহণ করেছিলেন। তার এ বক্তব্যও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

এর আগে লফটাস দাবি করেন, একজন গোয়েন্দা কনস্টেবল ফায়েদের অনৈতিক চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুস হিসেবে নিয়মিত অর্থ নিতেন। এমনকি হ্যারডস থেকে গোপনে একটি মুঠোফোন দেওয়া হয় তাকে।

হ্যারডসে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন লফটাস। তিনি অসুস্থ থাকায় দ্য গার্ডিয়ান তার কোনো মন্তব্য নিতে পারেনি। তবে তার সহকারী ইমন কোল বলেন, লফটাসের ওই বিবৃতি সঠিক হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ছেলে দোদি ও ডায়ানার মৃত্যুর পেছনে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন আল ফায়েদ। প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে তাদের হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল তার। গত বছর ৯৪ বছর বয়সে আল ফায়েদের মৃত্যু হয়। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আরবি/এস

Link copied!