মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর ফলে বিদেশি সাহায্যের বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, এবং সংস্থার কিছু কার্যক্রম মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের (State Department) আওতায় স্থানান্তরিত হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার (২৮ মার্চ) এক বিবৃতিতে বলেন, "আজ, পররাষ্ট্র দপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) কংগ্রেসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যে, সংস্থার কিছু কার্যক্রম পুনর্গঠনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র দপ্তরে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া, প্রশাসনের নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বন্ধ করার কারণ কী?
ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি সাহায্যের ব্যয় কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে এবং এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
"দুঃখজনকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বহু আগেই তার আসল উদ্দেশ্য হারিয়েছে। এর মাধ্যমে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা খুবই সীমিত; তবে ব্যয় অনেক বেশি," বলেন রুবিও।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে (Executive Order) স্বাক্ষর করে ৯০ দিনের জন্য সমস্ত মার্কিন বিদেশি সাহায্য বন্ধ করে দেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার বহু প্রকল্প বাজেট সংকোচনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, যদিও জরুরি মানবিক সহায়তা (humanitarian aid) কিছু ক্ষেত্রে অব্যাহত রাখা হয়।
বিশ্বব্যাপী কী প্রভাব পড়বে?
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্রতিবছর প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলারের বাজেট পরিচালনা করত, যা বিশ্বের ৪০% মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য দায়ী ছিল। সংস্থাটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
এই ঘোষণার ফলে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন দেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে, কারণ USAID বন্ধ হলে বিশ্বের নানা সংকটময় পরিস্থিতিতে মার্কিন সহায়তা হ্রাস পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী?
ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-এর বেশির ভাগ কর্মীকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার সংস্থার কর্মীদের জানানো হয় যে, আইন দ্বারা প্রয়োজনীয় নয় এমন সব চাকরি বাতিল করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার অস্থায়ী প্রধান জেরেমি লিউইন এক মেমোতে জানিয়েছেন যে, সংস্থার স্বাধীন কার্যক্রম আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং বেশির ভাগ কার্যক্রম পররাষ্ট্র দপ্তরে স্থানান্তরিত হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বন্ধ হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব কমে যেতে পারে, এবং রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে, কারণ তারা ইতোমধ্যে **বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রমে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
অনেক কংগ্রেস সদস্য, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন, কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বকে দুর্বল করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :