রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছিলো মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের একটি বিমান। তবে, বিধ্বস্ত হওয়ার পুরো কারণ এখনও অজানা। গত বুধবার কাজাখস্তানের আকতাউ শহরে আজারবাইজানের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। সেই বিমান দুর্ঘটনার দায় স্বীকার না করলেও আজারাবাইজানের বিমান বিধ্বস্তে ক্ষমা চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিনের ‘ক্ষমা নাটকের’ মাধ্যমেই কী ধামাচাপা পড়বে বিমান দুর্ঘটনাগুলো। এসব ঘটনার দায় আসলে কার?
রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই প্রায় ৩০০ যাত্রীসহ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছিলো মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমএইচ-১৭। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের দিকে যাচ্ছিলো বিমানটি। ইউক্রেনের পূর্ব দিকের ডনবাস অঞ্চল অতিক্রম করছিলো, তখন একটি মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে বিমানটিকে আঘাত করে। যদিও সেই সময় ডনবাস এলাকায় রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও ইউক্রেনের আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছিলো। ওই হামলায় বিমানে থাকা ৮০ জন শিশু এবং ১৫ জন ক্রুসহ ২৮৩ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। পরে ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন করতে তদন্ত শুরু করেছিলো নেদারল্যান্ডস। তদন্ত কর্মকর্তারা বছরের পর বছর ধরে কয়েক ডজন সাক্ষীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং শত শত প্রমাণ যোগাড় করেছেন। এই দুর্ঘটনার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ খুঁজে পেলেও রাশিয়া এর দায় অস্বীকার করেছে।
গত বুধবার আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী বিমান কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের অদূরে বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়া অঞ্চলের রাজধানী গ্রোজনি যাচ্ছিল। উড়োজাহাজটিতে যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ৬৭ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৩৮ জন বিমানযাত্রী নিহত হন।
রাশিয়ার আকাশসীমায় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। দুর্ঘটনার পর আজারবাইজান তদন্ত শুরু করেছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ভুলবশত রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যাত্রীবাহী উড়োজাহজটি ভূপাতিত করে।
এদিকে আজ রোববার ভোরে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়েতে যাত্রীবাহী একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ছিলেন ১৮১ জন। এর মধ্যে মারা যান ১৭৭ জন। যদিও বলা হচ্ছে, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তের আগে পাখির আঘাত বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছিল নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার। তবে বিষয়টি আসলে কতটুকু সত্য তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এসব বিমান হামলায় দোষী কারা
২০২২ সালে মালয়েশিয়ার বিমানের দুর্ঘটনায় তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করে নেদারল্যান্ডসের ‘ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব দ্য হেগ’ (হেগ-এর একটি আদালত)। তারা সবাই রাশিয়ান সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) সাবেক কর্মকর্তা। তারা পূর্ব ইউক্রেনের রুশ সমর্থিত ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) সরকারেরও অংশ ছিলেন।
ইগর গিরকিন ছিলেন ডিপিআরের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সার্গেই দুবিনস্কি ছিলেন ডিপিআরের সামরিক বুদ্ধিমত্তার প্রধান এবং লিওনিড ক্রাভচেঙ্কো দুবিনস্কি’র হয়ে কাজ করতেন। এর বাইরে আরও একজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় তিনি পার পেয়ে যান।
তবে যে তিনজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো, যদিও তাদের কাউকেই আদালতে উপস্থিত করা যায়নি।
এই দুর্ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত হয়েছিলো। কিন্তু মস্কো সেই তদন্তে কোনও সহযোগিতা করেননি। যদিও দোষী সাব্যস্ত হওয়া গিরকিন ও দুবিনস্কি, উভয়ই রাশিয়ার নাগরিক ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ইগর গিরকিনকে কারাগারে যেতে হয়, কিন্তু সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে।
২০২২ সালের আক্রমণ শুরু হবার পর থেকে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী নিয়ে সমালোচনা একটি ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
আজারবাইজানের বিমান দুর্ঘটনার পরে এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেশটি। এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানিয়েছে, ‘রাশিয়ার আকাশসীমায় দুঃখজনক এ ঘটনার জন্য (প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমা চেয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি আবারও শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।’
আপনার মতামত লিখুন :