ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চলার মধ্যেই ভারতের নৌবাহিনীকে নতুন যুদ্ধজাহাজ (স্টেলথ্ মিসাইল ফ্রিগেট) দিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধজাহাজটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আইএনএস তুশিল’। এটি প্রকৃতপক্ষে ক্রিভাক তৃতীয় প্রজন্মের ফ্রিগেট। জলযানটি ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। ইতোমধ্যে তুশিল রাশিয়া থেকে ভারতে আসার জন্য রওনা দিয়েছে।
গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ান প্রযুক্তিতে নির্মিত যুদ্ধজাহাজটি ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর কমিশন শেষে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ভারতের উদ্যেশে যাত্রা করে শত্রুপক্ষের নজরদারি এড়াতে সক্ষম ৩ হাজার ৯০০ টনের এই ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজ।
জানা যায়, ২০১৬ সালের সমঝোতা এবং ২০১৮ সালে সই হওয়া চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার কালিনিনগ্রাডের জাহাজ কারখানায় ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে দু’টি স্টেল্থ ফ্রিগেট। তার প্রথমটি, আইএনএস তুশিল। চলতি বছরে তার সমুদ্রযুদ্ধের মহড়াও হয়েছিল রাশিয়ায়। সেই প্রশিক্ষণে অংশ নিতে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর ২০০ জন অফিসার এবং কর্মী।
গত রোববার রাশিয়া সফরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তুশিলকে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
আইএনএস তুশিল প্রকৃতপক্ষে রুশ ‘অ্যাডমিরাল গ্রিগোরোভিচ’ শ্রেণির ফ্রিগেটগুলির একটি উন্নত সংস্করণ। ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই ধরনের মোট ছয়টি রণতরী ভারতকে সরবরাহ করেছে রাশিয়া।
২০১৬ সালের অক্টোবরে মস্কোর যুদ্ধজাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা ‘জেএসসি রসোবরোনেক্সপোর্ট’কে ফ্রিগেট নির্মাণের জন্য চুক্তি করে নয়াদিল্লি। ২০২২ সালের শেষে রণতরীটি সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়।
রাশিয়ার ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের ডিরেক্টর জেনারেল আলেক্সি রাখমানভ জানান, তুশিলের ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্বের কারণেই এটির নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়নি। ইউক্রেনের সংস্থা ‘জোরা-ম্যাসপ্রোয়েক্ট’-এর তৈরি ইঞ্জিন এতে বসাতে চুক্তিতে জোর দিয়েছিল ভারত। ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দেশটিতে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ শুরু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইউক্রেনীয় সংস্থা থেকে ওই ইঞ্জিন কালিনিনগ্রাদের শিপইয়ার্ডে এসে পৌঁছয়নি।
১২৫ মিটার লম্বা ও ৩,৯০০ টন ওজনের আইএনএস তুশিল ঘণ্টায় ৩০ নটিক্যাল মাইলের বেশি গতিতে ছুটতে পারে। এতে রয়েছে ৮টি ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র। এর থেকে উল্লম্বভাবে সেগুলিকে ছোড়ার সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া ২৪টি মাঝারি ও ৮টি স্বল্প পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রে (সারফেস টু এয়ার মিসাইল) সাজিয়ে তোলা হয়েছে যুদ্ধজাহাজটির অস্ত্রাগার। রণতরীটির ডেকের উপর বসানো আছে ১০০ মিলিমিটারের কামান। ডিচ প্রতিরক্ষার জন্য রয়েছে আরও দু’টি ‘ক্লোজ় ইন’ অস্ত্র।
ফ্রিগেটটিতে রয়েছে দু’টি ডাবল টর্পেডো টিউব এবং একটি রকেট লঞ্চার। পাশাপাশি রাডার, নেভিগেশন এডস, সোনার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট এবং ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে এর রণসাজ।
এছাড়া রণতরীটি অ্যান্টি-সাবমেরিন ও এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম। রুশ ‘কামভ ২৮’ এবং ‘কামভ ৩১’ কপ্টার এতে রাখছে নৌবাহিনী। এগুলির সাহায্যে শত্রু ডুবোজাহাজ খুঁজে তা ধ্বংস করতে আইএনএস তুশিলকে কাজে লাগানো হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য আইএনএস তলোয়ার শ্রেণির চারটি স্টেল্থ ফ্রিগেট বানাবে রাশিয়া। চুক্তির মোট অঙ্ক ২৫০ কোটি ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা)।
আপনার মতামত লিখুন :