রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রায় ১০ কিলোমিটার ঢুকে পড়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা। প্রথমে কিয়েভ বিষয়টি স্বীকার না করলেও অবশেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া আমাদের দেশে যুদ্ধ এনেছে, এখন তারা বুঝুক তারা আসলে কী করেছে। রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে হামলার দাবি করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে পশ্চিমাঞ্চলীয় লিপেটস্ক অঞ্চলের মোরোজোভস্ক ঘাঁটিতে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটায় সেনারা। এতে সেখানে মজুদ রাখা গাইডেড বোমা ও যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ব্যবহারের সক্ষমতা কমাতে রুশ বিমানঘাঁটিগুলোতে হামলা করছে কিয়েভ সেনারা। এই বিমান ব্যবহার করে ইউক্রেনের লক্ষ্যবস্তুতে এবং সামনের সারিতে বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রাশিয়া। ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে দেশটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একাধিক বিস্ফোরণ হয়েছে। হামলার সময় মোজারোভস্ক বিমানঘাঁটিতে রাশিয়ার এসইউ-৩৪, এসইউ-৩৫ এবং এমজি-৩১ যুদ্ধবিমানগুলো দাঁড়িয়েছিল।
ইউক্রেনের একটি সূত্র জানিয়েছে, হামলা চলাকালীন অধিকাংশ বিমানেরই উড্ডয়নের সময় ছিল না। একটি নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, কয়েক ডজন বিমান এবং হেলিকপ্টারের পাশাপাশি ৭০০ গাইডেড বোমা ধারণকারী একটি গুদামে ড্রোন হামলা চালায়ে ইউক্রেন। লিপেটস্ক অঞ্চলের রুশ গভর্নর ইগর আর্টামোনভ বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক ড্রোন হামলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নয়জন। এদিকে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি এই বক্তব্য দেন।
তিনি তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের দেশে যুদ্ধ এনেছে, এখন তারা বুঝুক তারা আসলে কী করেছে।’এ সময় তিনি ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি আমাদের প্রতিটি যোদ্ধা, প্রতিটি সৈনিক এবং কমান্ডারের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা আমাদের ইউক্রেনীয় অবস্থানের প্রতিরক্ষা এবং আমাদের প্রতিরক্ষামূলক কাজগুলোকে নিশ্চিত করে চলেছেন নিরলসভাবে। ইউক্রেনীয়রা জানে কীভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হয়।’এর আগে, গত ৫-৬ আগস্ট রাতে ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ভারী গোলাবর্ষণ করে। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রুশ শহর সুদঝার ট্যাংক, সাঁজোয়া যানসহ ঢুকে পড়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এর পরপরই শহরটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা যুদ্ধে এর আগে, ইউক্রেনীয় সেনারা কখনোই রাশিয়ার এতটা গভীরে ঢুকতে পারেনি। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। রুশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে কিয়েভপন্থী বাহিনী প্রায় ১ হাজার সেনা ও দুই ডজনেরও বেশি সাঁজোয়া যান এবং ট্যাংক ট্যাংক নিয়ে রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলের ১০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলেছে, ‘ইউক্রেনীয় বাহিনী ক্রমাগত আক্রমণাত্মক অভিযানের মধ্যে রাশিয়ার কুরস্ক ওব্লাস্তের ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে এগিয়ে গেছে।’ সংস্থাটি বলেছে, ‘কুরস্ক ওব্লাস্তে ইউক্রেনের অগ্রগতির বর্তমান নিশ্চিত সীমা এবং অবস্থান নির্দেশ করে যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী কমপক্ষে দুটি রুশ প্রতিরক্ষা লাইন ও একটি শক্তিশালী ঘাঁটিতে পদানত করেছে।’ ইউক্রেনের এই অগ্রগতি মূলত রাশিয়ার সুদঝা শহরকে কেন্দ্র করে। শহরটিতে অন্তত ৫ হাজার বাসিন্দা আছে। এই শহরটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মস্কোর সরকারি কর্মকর্তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিলেও রুশ ব্লগাররা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :