গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ক্রমবর্ধমান চাপে পড়েছেন। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারকে একাধিকবার প্রশ্ন করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল।
যেখানে টিউলিপের কাছে জানতে চাওয়া হয়, লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের সেই ফ্ল্যাটটি তিনি তার খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলেন কি না? এর জবাবে টিউলিপ জানান, উপহার হিসেবে নয় বরং তার বাবা-মা তাকে এই ফ্ল্যাটটি কিনে দিয়েছিলেন। এসময় এমন অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেন যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার।
তবে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সূত্র বলছে, টিউলিপকে ওই ফ্ল্যাটটি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে দিয়েছিলেন ওই ডেভেলপার। বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা আছে এমন একজন ব্যক্তি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে টিউলিপের মা-বাবা আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। আর তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পদ’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন।
ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা যায়, বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ। ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মজিবুলের বাবা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, তিনি ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে কিনেছিলেন। কিন্তু এই বিষয়ে আর কোনো তথ্য জানাননি তিনি।
জমি রেজিস্ট্রি রেকর্ডের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা ২০০৪ সালের সালের নভেম্বরে পান টিউলিপ। তিনি তখন লন্ডনের কিংস কলেজে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং তার কোনো আয় ছিল না। তবে এ সম্পত্তির কোনো মর্টগেজ ছিল না এবং এর কোনো মূল্যও উল্লেখ ছিল না। এর মানে এটি কেনা হয়নি বরং তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত জুলাইতেও ডেইলি মেইল টিউলিপ সিদ্দিক এবং লেবার পার্টির কাছে এ অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করে। তবে তখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি পায় সংবাদমাধ্যমটি। এরপর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি আর প্রকাশ করেনি ডেইলি মেইল।
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির সদস্য হন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড আসন থেকে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হন। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ওই আসনে চার বার প্রার্থী হয়েছেন টিউলিপ, প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। সম্প্রতি রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক।
আপনার মতামত লিখুন :