ঢাকা: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে চলমান জাতিগত সংঘাতের মধ্যে এবার নতুন করে নাগা এবং মৈতৈ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে। সেনাপতি জেলায় মৈতৈ গোষ্ঠীর কট্টর সংগঠন আমাম্বাই টেনগেগাল এবং স্থানীয় নাগা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি স্থানীয় নাগা সংগঠন ৪৮ ঘণ্টার হরতাল এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছে।
নাগা গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, গত ৩১শে অক্টোবর আমাম্বাই টেনগেগাল গোষ্ঠীর সদস্যরা দুইজন নাগা ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে। তারা এই ঘটনার জন্য মৈতৈ গোষ্ঠীর জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই বিষয়ে তারা সেনাপতি জেলা প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংয়ের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে।
গত বছরের ৩ মে থেকে মণিপুরে জাতিগত হিংসা অব্যাহত রয়েছে। ইম্ফল উপত্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মৈতৈ সম্প্রদায় তফশিলি উপজাতির মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে কুকি-জো আদিবাসীরা এর বিরোধিতা করে। মণিপুর হাইকোর্ট এই বিষয় নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দেয় যে মৈতৈদের তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। এই নির্দেশিকার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এপ্রিল ২০২৩-এ অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (ATSU) এর একটি মিছিল থেকে চূড়াচাঁদপুরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যা পরবর্তীতে অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মণিপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকি এবং মৈতৈ জনজাতির মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত চলমান এই সংঘাতে কয়েকশো সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন স্থানে বাফার জোন স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তফশিলি উপজাতির মর্যাদা এবং সংরক্ষিত জমির মতো বিষয়গুলো। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক নাগা-মৈতৈ সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সরকার দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি স্থাপনে চেষ্টা চালালেও এখনো পর্যন্ত মণিপুরের এই জাতিগত হিংসার অবসান ঘটেনি।
আপনার মতামত লিখুন :