পিরোজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ০৯:০৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ভান্ডারিয়ায় তীব্র তাপদাহে

পথের ধারে সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসেছে কৃষ্ণচূড়া

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। কাঠফাটা রৌদ্রের তীব্রতর তাপদাহ উপেক্ষা করেই বসন্তের সেই রক্তিম রেশ ধরে রেখেছে গ্রীষ্মের চোখধাঁধানো লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া। খররোদে তপ্ত দিনে ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ব্যস্ততম মেডিকেল মোড় সড়কের পথের ধারে কৃষ্ণচূড়া ডালি সাজিয়ে প্রকৃতির রুপের এভাবেই যেন জানান দিচ্ছে । এ সড়কের কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে লালে লাল। দূর থেকে মনে হবে কৃষ্ণচূড়া ডালে ডালে আগুন লেগেছে। কৃষ্ণচূড়া যে মানুষের মনে নতুনের দোলা দেয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এরই মধ্যে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার বিভিন্ন পথঘাটে কৃষ্ণচূড়া এনেছে ভিন্ন আমেজ। অনেক স্থানে দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের। গ্রাম বাংলার মেঠো পথের দুই ধারে এখন শোভা পাচ্ছে লাল এই ফুল। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে দিশেহারা পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য। জানা গেছে, সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দু‌ই মাস নিয়েই গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্মের ফুলের কথা বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার কথা। সুমিষ্ট রসাল ফলের জন্য গ্রীষ্মকাল এগিয়ে রয়েছে, তবে ফুলের দিক থেকেও
অন্যসব ঋতুর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে গ্রীষ্মকাল। তাই ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায় গ্রীষ্মকালকেই। এ মৌসুমে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের যে উম্মাদনা, তা এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো অসম্ভব।

এদিকে সারাদেশের মতো ভাণ্ডারিয়ায় প্রকৃতিতেও এখন কৃষ্ণচূড়ার সুদিন বইছে। এ সুদিনের সুবাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের হৃদয়। পাখির ডানায়, হাওয়ায়-হাওয়ায় উড়ছে তার লাবণ্য। গাছে গাছে রক্তিম আভা নিয়ে জেগে থাকা কৃষ্ণচূড়া দৃষ্টি কাড়ছে সেইসব ফুলপ্রেমি মানুষদের, যারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফুলের জন্য অপেক্ষা করেন। আর কৃষ্ণচূড়ার জন্য প্রহর গোনেন। শনিবার দুপুরে ভাণ্ডারিয়া-মঠবাড়িয়া-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মেডিকেল মোড়ে এলাকায় দেখা মিলেছে মনমুগ্ধকার কৃষ্ণচূড়ার। প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যের
ছবি তুলছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার গাছ থেকে একমুঠো ফুল বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

ভাণ্ডারিয়া পৌর শহরের বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি একজন ফুলপ্রেমি মানুষ। যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে তখন গাছের লাল-সবুজ রঙে যেন মুখর হয়ে উঠে। আর এ সময়টা আমার কাছে অন্যরকম ভাল লাগে । এ অনুবতির কথা মুখে বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

অপর শিক্ষার্থী সায়লা আক্তার মীম বলেন, কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতি যেন এক অপূর্ব সুন্দরে সাজে। প্রতিদিন এ দৃশ্য না দেখলে মনে হয় জীবনটাই বৃথা। তাই প্রতিবছর নয়, প্রতিটি দিনই যেন অপেক্ষায় গ্রীষ্মের এই দিনগুলোর জন্য।

স্থানীয় কবি ইয়াছিন মোল্লা বলেন, আমি কৃষ্ণচূড়াকে প্রচন্ড ভালোবাসি। আমি তাকে নিয়ে বই লিখি। গ্রীষ্মের এই খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো। রক্তিম লালে প্রকৃতিকে যেন অনেক অপরূপ দেখায়। ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দীন কামিল মাদ্রসার ইতিহাস বিভাগের
সহকারী অধ্যাপক মো: বশির উদ্দিন বলেন, বৈশাখ মানেই ভিন্ন সাজে বাংলার প্রকৃতির ইতিহাস। আকাশে গনগনে সূর্য। কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। গ্রীষ্মের এই নি®প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। রুদ্র গ্রীষ্ম কেবল আগুনই ঝরায় না, লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে মনও কাড়ে সকলের।

এটিই যেন তার ধর্ম (প্রকৃতির নিয়ম)। ভাণ্ডারিয়া সাহিত্য ও সংস্কৃতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো: এনায়েত হোসেন বলেন, বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশ থেকে থেকে রঙিন এই গাছ। এক সময় এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি, মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহবান জানান প্রকৃতি প্রেমীকদের।

মন্তব্য করুন