শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০৪:১১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

শ্রীমঙ্গলে প্রচন্ড তাপদাহে উৎপাদনের গতি থেমে গেছে

শ্রীমঙ্গলে প্রচন্ড তাপদাহ চা পাতার রং লালচে

প্রচন্ড তাপদাহে চা গাছে আসছেনা নতুন কুঁড়ি । কোথাও কোথাও জ্বলে পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে গাছ। কোথাও ধরেছে বাঞ্জি দশা। আবার কোথাও ধরেছে লাল রোগ। চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই নেমে গেছে উৎপাদনের গতি। এ অবস্থায় এই দূর্যোগ থেকে চা বাগানকে রক্ষা করতে চা শ্রমিক, চা বাগন ম্যানেজার ও চা বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রানান্তর।

মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগান রয়েছে। মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানে সরজমিনে দেখা যায়, প্রচন্ড রোদে শ্রমিকরা পাতা তুলছেন। অনেকেই ঘামে ভিজে গেছেন। তবে যে সকল সেকশনে সেডটি কম সে সকল সেকশনে গাছের পাতায় ধরেছে ভাজ। যেটিকে তারা চায়ের বাঞ্জি দশা বলেন। কোথাও দেখা যায় রেডস্পাইডারের আক্রমনে গাছে ধরেছে লাল রোগ। আবার কোথাও গাছের পাতা মরে ঝরে যাচ্ছে।

এ সময় বিগত ডিসেম্বরে প্রুনিং করা কয়েকটি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, গাছে এখন সুটই (নতুন কুঁড়ি) আসেনি। চা শ্রমিকরা বলেন,  বৃষ্টি না হলে এই গাছে সুট আসবে না।  চা গাছে বাঞ্জি দশা যাতে না ধরে সে জন্য ঔষদ ¯েপ্র করছেন শ্রমিকরা। যে সময় নতুন পাতায় তাদরে হাত ভরে যাওয়ার কথা এই সময়ে নতুন সুটের (কুড়ি) জন্য বাঞ্জিদশায় আক্রান্ত পাতা তুলে ফেলতে হচ্ছে শ্রমিকদের। অন্যদিকে পাতা কম থাকায় প্রতিদিনের ২৪ কেজি পাতাও উঠাতে পারছেন না তারা।

ষাটোর্দ্ধ চা শ্রমিক অলকা বালা জানান, প্রচন্ড রোদে শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে এখন পাতা পান ১০ থেকে ১৫ কেজি। আর পাতা চয়নের পাশাপাশি গাছ রক্ষায় সার, পানি দেয়াসহ তাদের করতে হচ্ছে প্রতিরক্ষা মূলক কাজও। তিনি বলেন, ২৪ কেজিতে তাদের নিরিখ প্রতিদিনের বেতন। তাদের অনেকেই ২৪ কেজির উপরে পাতা তুলেন। উপরে উঠানে অতিরিক্ত টাকা পান। মুল হাজরির সাথে এটা সংযুক্ত করে তারা কোন রকমে সংসার চালান। তবে এখন ২০ কেজির উপরে কেউ পাতা উঠাতে পারেন না।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ এর সিলেট অঞ্চলের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলী জানান, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়ার্স তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রী পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলেই খরায় পড়বে চা। তবে চা বাগানে সেড টির কারনে ৩৫ ডিগ্রী পর্যন্ত সহনীয়।

এ অবস্থায় চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে ইরিগেশনের পাশাপাশি প্রতি চার গাছের মধ্যে মাটি গর্ত করে পঁচা গোবর এর সাথে কিছু টিএসপি মিশিয়ে আবার মাটিতে মিলিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ চা গবেষনা কেন্দ্রর পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান, প্রতিদিনই চা গবেষনা কেন্দ্রের টিম বিভিন্ন বাগান ভিজিট করে পরামর্স দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে তা বাস্তবায়িত করে সফলতাও পেয়েছেন।

আর এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু একটি দূর্যোগ প্রবণ দেশ সেহেতু খরা মৌসুমের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। বিশেষ করে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহন করতে হবে এবং এই পরামর্সই দিচ্ছে চা বোর্ড।

মন্তব্য করুন