কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০৭:২২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

চা-বাগানে দৃষ্টিনন্দন ক্যামেলিয়া লেক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ক্যামেলিয়া লেকটি পর্যটকদের স্বর্গোদ্যান হিসেবে দেশে-বিদেশে সুপরিচিত মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন শিল্পে নতুন সংযোজন। এখানে যেতে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়ক ধরে দক্ষিণ দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার সামনে গেলেই হাতের ডানে দেখা মেলে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত চা-বাগানের শ্রমিক-কর্মচারী সহ প্রায় ৯০ হাজার জনসংখ্যার নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালের। হাসপাতালটিকে পিছনে ফেলে আরো ২ কিলোমিটার মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে দেখা মিলবে প্রকৃতির নিজ হাতে তৈরি করা অপরূপ ও চোখ ধাঁধানো মায়াবী লেকটির। লেকের পাশের পুরোটাই বালুকাময়। লেকের পানিই ক্যামেলিয়া লেকের সৌন্দর্য মুগ্ধতা জাগানিয়া। নীল আকাশের নিচে চারদিকে ছোট-বড় পাহাড়ি টিলা ও সারি সারি চা-বাগান। সব সময়ই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে এ লেকটি বিসলার বান বা ক্যামেলিয়া বাঁধ নামে পরিচিত। তবে এর প্রকৃত নাম “ক্যামেলিয়া লেক”। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ডানকান ব্রাদার্স এর মালিকানাধীন শমশেরনগর চা বাগানে দৃষ্টিনন্দন ক্যামেলিয়া লেকটির অবস্থান।

চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রাকৃতিক এ লেকটিতে কিছুটা কৃত্রিমতাজুড়ে দিয়েছেন। ইট-সিমেন্টের কিছু কৃত্রিম কাজ লেকটির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। লেকটির পানির ওপরে একটি পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। এখন বিসলার বান বা ক্যামেলিয়া লেক হয়ে উঠেছে অসাধারণ এক পর্যটন স্পট। লেকটির পাশে রয়েছে একটি ঘর। যেটি স্থানীয় চা শ্রমিকদের কাছে ক্লাব ঘর নামে পরিচিত। এ ঘরে বা গাছের ছায়ায় পর্যাপ্ত সময় কাটানো সম্ভব। এখানে বিকালে গেলে পরিযায়ী পাখির কলতান আর জলকেলির দৃশ্য মনে পরম প্রশান্তি এনে দেবে। শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য বাংলাদেশের প্রায় সব চা বাগানেই ছোট বড় লেক দেখতে পাওয়া যায়। এসব বাগানের লেকগুলো সাধারণত চা বাগানের নিচু জমিতে বা পাহাড়ি টিলার পাদদেশে হয়ে থাকে। কিন্তু ক্যামেলিয়া লেকের বৈশিষ্ট্য হলো এটি বাগানের প্রায় শেষ প্রান্তে টিলার ওপরাংশ জুড়ে অবস্থিত। লেকটিতে যাওয়ার আঁকাবাঁকা মেঠোপথে চোখে পড়ে শত শত বানরের পাল।

ক্যামেলিয়া লেকটি এখনো সুপরিচিত কোনো পর্যটন স্পট নয়। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি একেবারে নতুন। তাই সেখানে যেতে হলে একা নয়, দল বেধেঁ যাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিতে পারেন। লেকের পানিতে গোসল করা এবং লেকের পাশের পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত যানবাহন নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যারা প্রকৃতির সুরম্য জেলা মৌলভীবাজার ভ্রমণে যেতে চান তারা অবশ্যই ক্যামেলিয়া লেকটিকে ভ্রমণের তালিকায় রাখবেন। তবে মনে রাখতে হবে এ লেকটি যেহেতু চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত সেহেতু লেকটিতে যাওয়ার আগে চা বাগান কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিলে ভালো হয়। লেকটি দেখতে গেলে একই সঙ্গে তিনটি পর্যটন স্পট দেখা সম্ভব। লেকটির পাশেই অবস্থিত অসাধারণ কারুকার্যময় ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতাল এবং মনোমুগ্ধকর গলফ মাঠ। লেকটি দেখতে গেলে বোনাস হিসেবে দেখা যাবে এ’দুটি স্পটও।

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস অথবা ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ বা শমসেরনগর এসে,এখান থেকে বাস, সিএনজি- অটোরিকশায়  সহজেই লেকটিতে পৌঁছানো সম্ভব। যাদের প্রচুর হাঁটার অভ্যাস আছে তারা শমসেরনগর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার পথ হেঁটেও যেতে পারেন।

মন্তব্য করুন