এসএম শাফায়েত, ইউএই ব্যুরো

প্রকাশিত: ৯ মে, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

শারজায় গাড়িতে শিশুর মৃত্যু

অপরাধীকে ক্ষমা করলেন বাংলাদেশী দম্পতি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রতিদিন সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে যায় শিশু মুনতাসির। মুনতাসিরমহ সাত শিশুকে একসঙ্গে স্কুলে আনা নেয়ার দায়িত্ব পালন করেন এক নারী গাড়ি চালিকা। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সবাইকে বাসা থেকে নিয়ে একসঙ্গে নিয়ে স্কুলে নামিয়ে দেন তিনি।

যথারীতি স্কুল ছুটি হলে আবারও তাদেরকে নিয়ে আসতে স্কুল গেটে যান ওই গাড়ি চালিকা নারী। কিন্তু এ কী! গাড়ির মধ্যে তখনও গভীর ঘুমে শিশু মুনতাসির। ডেকে তুলতে চাইলে আর পাওয়া যায় না তার কোন সাড়া। মুহূর্তে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্স।

পরীক্ষা নিরিক্ষা করে মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট জানান, মুনতাসির আর কখনই ঘুম থেকে উঠবে না। পরে তার নিথর দেহ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে জানানো হয়, বদ্ধ গাড়িতে শ্বাসবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।

মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি ঘটেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাদেশিক শহর শারজায়। শিশু মোহাম্মদ মুনতাসির (৭) প্রবাসী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিয়াজের পুত্র।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গেলো সোমবার (৬ মে) সকালে মুনতাসিরকে তার অভিভাবকরা শারজার জুলেখা হাসপাতালের পেছনে তাদের ভাড়া বাসা থেকে আরো সাতটি শিশুসহ নিয়মিত কার লিফট প্রদানকারী এক পাকিস্তানি নারী গাড়ি চালিকার গাড়িতে তুলে দেন। গাড়ি স্কুলে পৌঁছালে অন্যান্য শিশুরা নেমে পড়লেও মুনতাসির গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় আর নিজে থেকে নামতে পারেনি। এ অবস্থাতেই মহিলা ফিরে আসেন তার নিজ বাসায়।

বিকাল ৩টার দিকে স্কুল থেকে অন্যান্য বাচ্চাদের আনতে গেলে মুনতাসিরের নিথর দেহ তার চোখে পড়ে। দীর্ঘ প্রায় সাত ঘণ্টা গাড়ির দরজা জানালা বন্ধ থাকায় অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গাড়িতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে শিশু মুনতাসির।

নিহত মুনতাসির শারজার ইবনে সিনা স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা মোহাম্মদ রিয়াজ দেশটিতে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

এ ব্যাপারে শারজাহর আল ওয়াসিত পুলিশ স্টেশনে একটি মামলা নথিভুক্ত হয়। তড়িৎ অভিযানে আটক করা হয় গাড়ি চালিকা ওই পাকিস্তানি নারীকে। তবে সন্তান হারানোর কঠিন শোককে সংবরণ করে, সৃষ্টিকর্তার ফয়সালাকে মেনে নিয়ে ঘটণার জন্য দায়ী নারীকে ক্ষমা করে দেন সন্তানহারা দম্পত্তি।

ফলে কোনরূপ মামলা কিম্বা ক্ষতিপূরণ বা ব্লাডমানি ছাড়াই তাকে খালাস দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। সেই সঙ্গে ঘটনাটিকে উদারতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেন দেশটির প্রশাসন। এ নিয়ে শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বড় পরিসরে সংবাদ প্রচার করলেও শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য করা হয়নি। বরং কোন আলোচনা সমালোচনায় না গিয়ে প্রয়াত সন্তানের জন্য দোয়া কামনা করা হয়েছে সকলের কাছে।

এদিকে প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে পরদিন মঙ্গলবার (৭ মে) মুনতাসিরের মরদেহ দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেলে স্থানীয় একটি কবরস্থানে বেদনাবিধুর পরিবেশে তার নিথর দেহ মরুর বালুতে অন্তিম শয়নে শায়িত করা হয়।

মন্তব্য করুন