আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল, ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার

ঈদের ছুটিতে ঘুরে দেখতে পারেন রাজধানীর উত্তর-পূর্বের দর্শনীয় স্থান

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চিরকালই মানুষের পাখি হবার সখ। কিন্তু উড্ডয়নে অক্ষম দু'টি ডানা সর্বোচ্চ পেঙ্গুইন কিংবা উট পাখি হতে পারে। তবুও মানুষের মনে আরো দু'টি অদৃশ্য ডানা আছে। সুযোগ পেলেই তারা চষে বেড়াতে চায় হৃদয়ের অন্তরীক্ষ। অপেক্ষা কেবল একটু  অবসর সময়ের.. 


এইতো সময়, যান্ত্রিক নাগরিকতার দেয়ালে ঝুলছে চন্দ্র পঞ্জিকা। বছর ঘুরে হতাশার আকাশে আবারো মিলবে চাঁদের দেখা। কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য সময়টা অত্যন্ত আনন্দের। সমস্ত হাপিত্যেশ, ব্যস্ততা ফেলে পরিবার পরিজন নিয়ে সময়টা উৎযাপনের। সময়টাকে রাঙিয়ে তুলতে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত নরসিংদী জেলার বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান।

যান্ত্রিক শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে ঢাকার উত্তর-পূর্ব প্রান্তের চমৎকার কিছু মনকে প্রশান্তি দেওয়ারমত  দর্শনীয় স্থানের আদ্যপান্ত জানাচ্ছেন - আরফান হোসাইন রাফি

উয়ারী-বটেশ্বর :  উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত।
অনেকের কাছে নামটা মাটির নিচের শহর বলেই পরিচিত। বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে এটি অন্যতম।
উয়ারী এবং বটেশ্বর পাশাপাশি দু'টি গ্রামের সমন্বয়ে স্থানটিকে উয়ারী বটেশ্বর নামকরণ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে মাটির নিচে থাকা এই স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরানো। ধারণা করা হয়, তৎকালীন বন্যা-প্লাবন বা নদীভাঙনের ফলে মাটিচাপা পড়ে যায় একটি নগর-জনপদ। ১৯৫৬ সালে উয়ারী গ্রামে মাটি খননকালে প্রায় চার হাজার ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রার একটি ভাঙার পাওয়া যায়। এর পর ধীরে ধীরে দেখা মিলে প্রচুর প্রাচীণ নিদর্শনের। পরিবর্তীকালে অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মাটি খনন করে পাওয়া যায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এই দুর্গ-নগর। বর্তমানে এটি উয়ারী বটেশ্বর দূর্গ নগর উন্মুক্ত জাদুঘর হিসাবে প্রচলিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উপভোগ করার পাশাপাশি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য যায়গাটি উপযুক্ত। দু’পাশে লটকন বাগানের মধ্য দিয়ে নিরল রাস্তায় স্নিগ্ধ হাওয়া খেতে খেতে মাটির নিচের শহরে যেয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারেন আপনিও।


কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব গামী যেকোনো  বাসে করে মরজাল বাস-স্টেশন নেমে সিএনজি কিংবা অটোতে চড়ে উয়ারী বটেশ্বরে যেতে পারবেন।


ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি : গিরিশ চন্দ্র সেন (১৮৩৪-১৯১০) নামটা অনেকের কাছেই সুপরিচিত। হওয়ারই কথা, তিনি  সেই ব্যক্তি যিনি প্রথম পবিত্র কোরআন শরীফের বাংলা ভাষায় পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন। মৌলভী এবং ভাই গিরিশচন্দ্র সেন নামেই তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি ধর্মবেত্তা,অনুবাদক ও বহুভাষীক। এছাড়া অর্জন করেছিলেন আরবি, ফার্সি, উর্দু এবং ইসলামী বিষয়াবলী সমন্ধে পাণ্ডিত্য।
তার বাড়িটি নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে অবস্থিত। বাড়িটি  দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায়  ২০১৬ সালে ভারতীয় কমিশনারের অনুমদনে মূল কাঠামো ঠিক রেখে চুন, সুরকি,মূল্যবান কাঠ ব্যবহার করে বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। তারপর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে ঐতিহাসিক এই স্থানটি দেখার জন্য দেশ বিদেশ থেকে ভিড় জমায় দর্শনার্থীরা। গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি যাদুঘর সপ্তাহে ৬ দিন খোলা থাকে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ভ্রমণ পিপাসু বা দর্শনার্থীরা অতি সহজেই আসতে পারেন এ স্থানটিতে। 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে নরসিংদী গামী যেকোনো বাসে করে পাঁচদোনা বাজার বা  ড্রিম হলিডে পার্কের সামনে নামতে হবে। এরপর অটো কিংবা রিক্সাতে চড়ে যাওয়া যাবে ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি।


ডাঙা উকিল বাড়ি :  এ বাড়িটি মূলত তৎকালীন ভারতবর্ষের দেবোত্তর এলাকার জমিদার লক্ষণ সাহার। তিনি প্রধান জমিদারের অধিনস্থ সাব-জমিদার ছিলেন। পরিবর্তীকালে ক্রয় সূত্রে আহম্মদ আলী উকিলের নামে হয়। তাই বর্তমানে উকিল বাড়ি হিসাবেই অধিক পরিচিত।বয়স বিবেচনায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও বাড়িটি এখনো বেশ সচল এবং পরিপাটি। ইট, সুরকি ও রড দিয়ে তৈরি দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়িটির চারপাশে দেখতে পাওয়া যায় প্রাকৃতিক নানা বৈচিত্র্যময় দৃশ্য। জমিদার বাড়ির সামনে চৈত্র-বৈশাখে ধান বুনা এবং আষাঢ়-শ্রাবণে ধান কাটার অপরুপ গ্রামীণ দৃশ্য ও পেছনে রয়েছে গাছগাছালি যুক্ত বাগানে পাখিদের কলরব। এছাড়া এই শৈল্পিক জমিদার বাড়ির ডান পাশে রয়েছে  একটি সান বাধানো পুকুরঘাট। প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে একটু সুন্দর সময় কাটাতে বিভিন্ন প্রান্তর থেকে এখানে  ছুটে আসে দর্শনার্থীরা।

কিভাবে যাবেন? 

ঢাকা থেকে নরসিংদী গামী যেকোনো বাসে করে পাঁচদোনা বাস স্টান্ড নেমে সিএনজি ধরে ডাঙা বাজার যেতে হবে।  সেখান থেকে রিক্সা করে কিংবা হেঁটে যাওয়া যাবে ডাঙা উকিল বাড়ি।

নরসিংদীর আরও কিছু উল্লেখযোগ্য  দর্শনীয় স্থান হলো-বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্মৃতিসৌধ, সোনাইমুড়ি টেক, মনু মিয়ার জমিদার বাড়ি ইত্যাদি।

মন্তব্য করুন